সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়। তিন বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।
রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুসারে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) শেখ আবু তাহেরের সই করা প্রজ্ঞাপনে তিন বিচারপতির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর ভাষ্য, দেশের সংবিধানের ৯৬ (৪) অনুচ্ছেদমতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে সই করা পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করেছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
তিন বিচারপতির বিষয়ে অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনার মধ্যে ২০১৯ সালের আগস্টে তাঁদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তখন তিন বিচারপতি ছুটির আবেদন করেন। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়, হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাঁদের বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে তাঁরা ছুটির প্রার্থনা করেন। তবে কী অভিযোগে তাঁদের বিচারকাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয় এবং বিচারপতিদের অসদাচরণ তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তখন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এর পর থেকে তিন বিচারপতি বিচারকাজের বাইরে ছিলেন। বিচারপতি সালাম মাসুদ চৌধুরী ২০০২ সালের ২৯ জুলাই এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
এদিকে ‘দলবাজ’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ অথবা তাঁদের অপসারণের দাবিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাও এবং বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভের মুখে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়া, অর্থাৎ বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা সেদিন জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তবে ওই বিচারপতিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
এরপর বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ৭ নভেম্বর প্রচারিত এক সংবাদের সূত্র ধরে সেদিন একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলেও ওই কাউন্সিলে কয়েকজনের বিচারসংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান। রাষ্ট্রপতির কাছে সু্প্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে কোনো বিচারপতি সম্পর্কে কোনো অভিযোগ পাঠানো হয়নি।
এর আগে ২০ অক্টোবর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে রায় দেন আপিল বিভাগ। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে ১০ বছর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ২০১৭ সালে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ে আপিল বিভাগ সংবিধানের এ-সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণের প্রক্রিয়া জাতীয় সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফেরে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।