প্রাপ্য সম্মান না দেওয়া, রাজনৈতিক সৌজন্য না দেখানোসহ নানা অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই শীর্ষ নেতার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশ ছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ছোট করা হয়েছে বলে দাবি এই শাখার দুই শীর্ষ নেতার। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার কণ্ঠেও একই সুর।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার দুই মহানগর শাখার নতুন শীর্ষ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ। তাঁরা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হিসেবে বিবেচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হন মাজহারুল কবির, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
ছাত্রলীগের সূত্রগুলো বলছে, নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকেই সাদ্দামের সঙ্গে তানভীরের ‘মানসিক দূরত্বের’ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এই দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় বারবার মারামারিতে জড়াতে থাকেন।
গত কয়েক মাসে তানভীরের অনুসারীরা ওয়ালী ও মাজহারুলের অনুসারীদের সঙ্গেও কয়েকবার মারামারিতে জড়ান। সে সময় মাজহারুল ও তানভীরের সম্পর্কের তিক্ততা নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা ছিল।
তবে বর্তমানে মাজহারুল ও তানভীর ঐক্যবদ্ধ আছেন। সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বরের ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে মাজহারুল ও তানভীর যুগপৎভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। প্রচলিত কিছু রীতি, যা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে সুবিধা দেয়, সেগুলোর অবসান পর্যন্ত চাইছেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মধ্যে এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, হলগুলো এখন ছাত্রলীগের চার পক্ষের নিয়ন্ত্রণে। এখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের যেমন পক্ষ আছে, তেমনি আছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ। কোনো কারণে পক্ষগুলো মুখোমুখি অবস্থান নিলে, মারামারি-সংঘর্ষে জড়ালে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আয়োজনে ছাত্রসমাবেশটি হয়। প্রথমে ৩১ আগস্ট সমাবেশটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তা এক দিন পিছিয়ে ১ সেপ্টেম্বরে নেওয়া হয়।
ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম। সঞ্চালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার দুই মহানগরের নেতারা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই শীর্ষ নেতার দাবি, অতীতে এ ধরনের সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়ে এসেছেন। বিষয়টি ছাত্রলীগে অনেকটা প্রতিষ্ঠিত রীতি। কিন্তু সাদ্দাম-ওয়ালী এই রীতির ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।
সমাবেশের চার দিন পর ৫ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে মাজহারুল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। এই পোস্টে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এখতিয়ারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তাৎক্ষণিকভাবে পোস্টটি শেয়ার করেন তানভীর। ঢাকার দুই মহানগর শাখার চার শীর্ষ নেতাও পোস্টটি শেয়ার করেন।
মূলত, এই পোস্টকে ঘিরেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দূরত্ব-বিরোধের বিষয়টি সামনে আসে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আমাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। অনুষ্ঠান ছিল ৩টা ৪৫ মিনিট থেকে ৬টা ১০ মিনিট পর্যন্ত, ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিটের। আমাদের বলা হয়েছিল, সময়স্বল্পতার কারণে আমরা তিন থেকে চার মিনিট করে বক্তব্য দিতে পারব। আর কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক (সাদ্দাম-ওয়ালী) বক্তব্য দেবেন আট মিনিট করে। কিন্তু আমরা বক্তব্য দিতে পারিনি। তাঁরা নিজেদের বক্তব্য প্রলম্বিত করেছেন। এর কারণ আমরা জানি না। তাঁরা মাইকে অন্তত ঘোষণা দিতে পারতেন যে সময়স্বল্পতার কারণে অন্যদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। তাঁরা তা-ও করেননি। সমাবেশের চার দিন পরও কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলেননি। তাঁরা কেন এসব করেছেন, কেন তাঁরা সামান্য সৌজন্যটুকুও আমাদের প্রতি দেখাননি, তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।’
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য দিতে না দিয়ে অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা হচ্ছে ছাত্রলীগের হৃৎপিণ্ড। অথচ আমাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না। কেন আমাদের এড়িয়ে চলা হচ্ছে, তা আমরা জানি না। প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য দিতে পারাটা রীতি অনুযায়ী আমার অধিকার। শেখ হাসিনার প্রতিটি কর্মীর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হচ্ছে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারা। সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’
বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি রাজিবুল ইসলাম।
ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়াকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিরোধ ইতিমধ্যে ডালপালা মেলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখন অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ, হল কমিটিতে কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতাকে ‘ভাগ’ না দেওয়া, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের স্থায়ী বহিষ্কারের ক্ষমতা চেয়ে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। কেন্দ্রের ‘শাসনের’ পরিবর্তে তাঁরা অনেকটা ‘সমান্তরাল মর্যাদা’ চান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজ শাখা বর্তমানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীন। কয়েক মাস ধরেই সাত কলেজ শাখাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অধীন নিতে মাজহারুল-তানভীর নানাভাবে তৎপরতা চালান। কেন্দ্রের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর এখন তাঁরা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে খোলামেলাভাবে কথা বলছেন। এই লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সাত কলেজের একাডেমিক সংকট নিরসনে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
মাজহারুল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত কলেজের নেতা-কর্মীরা আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান। আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
তানভীর বলেন, ‘সাত কলেজের নেতা-কর্মীদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সময় দিতে পারছে না। অন্যদিকে, এই ইউনিটগুলোর নেতা-কর্মীরা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ এক বছর। এই কমিটির আট মাস পেরোতে চলছে। কিন্তু এখনো বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও হল ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন করতে পারেননি মাজহারুল-তানভীর।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা ‘ভাগ’ পান। তাঁদের দুজনকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক হলেই পক্ষ রয়েছে। পক্ষভুক্তরা কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতাকে ‘প্রটোকল’ দেন। কেউ কেউ বিভিন্ন হলের শীর্ষ নেতৃত্ব পান।
কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার অনুমোদন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি ঘোষণার অলিখিত রীতি আছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে হল কমিটিতে কেন্দ্রকে ‘ভাগ’ দিতে হয়। এখন চলমান বিরোধের জেরে এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন মাজহারুল-তানভীর।
তবে ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, গত জুলাইয়ে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে মাজহারুল ও তানভীরের পছন্দের কিছু ব্যক্তিকে কাঙ্ক্ষিত পদ দেওয়া হয়নি। আর কয়েকজনকে কোনো পদই দেওয়া হয়নি। এই ক্ষোভ থেকেই এখন তাঁরা কেন্দ্রকে হল কমিটিতে ‘ভাগ’ দিতে চাইছেন না।
এ বিষয়ে মাজহারুল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে আমরা কোনো গ্রুপিং চাই না। হলগুলোয় কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপ বা বলয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্বাতন্ত্র্যের প্রতি হুমকি। আমরা কথা দিতে চাই যে এই সংস্কৃতির পরিবর্তন হলেও অন্যদের (কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতা) সঙ্গে রাজনীতি করার কারণে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না। যোগ্যতম প্রার্থীকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
হল কমিটিতে কেন্দ্রকে ‘ভাগ’ দেওয়ার বিষয়টিকে অন্ধকার সময়ের রীতি বলে উল্লেখ করেন তানভীর। তিনি বলেন, ‘এগুলো এখন থাকা উচিত নয়। ছাত্রলীগে এখন কোনো সিন্ডিকেট নেই। ছাত্রলীগের একমাত্র নেতা শেখ হাসিনা, আর কেউ নন। এসব রীতি আমরা ভাঙব।’
অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের স্থায়ী বহিষ্কারের ক্ষমতাও চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এখন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করার ক্ষমতা নিয়ে চলবে। গঠনতন্ত্রে এ বিষয় কারও কারও সুবিধার জন্য সংযোজন করা হয়েছিল। অনেকে এগুলোকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এখন তো কালো অধ্যায় আর নেই। শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও কথা আমরা শুনব না।’
অন্যদিকে, স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করবেন বলে জানান মাজহারুল।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রলীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সেই নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যেন হস্তক্ষেপ করতে না পারে, সে জন্য আগে থেকেই একটি বার্তা দিতে চাইছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এ জন্য তারা কেন্দ্রকে ‘চাপে’ রাখার কৌশল নিয়েছে। এই কৌশলের কারণেই সাম্প্রতিক এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই শীর্ষ নেতার নানা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামে মুঠোফোনে গতকাল একাধিক কল করা হলেও সাড়া মেলেনি।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত সময়স্বল্পতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদের ছাত্রসমাবেশে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সমাবেশের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যস্ত শিডিউল। রোদ-বৃষ্টি মিলিয়ে নেতা-কর্মীরাও ক্লান্ত ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সমাবেশে বক্তব্য দিতে চাননি। পরে প্রধানমন্ত্রী বলায় তিনি বক্তব্য দেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা, ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন শীর্ষ নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতাসহ অনেকের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময়স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এতে অভিযোগ করার মতো কোনো ব্যাপার আছে বলে মনে করি না। বিষয়টি আমাকে বা কেন্দ্রীয় সভাপতিকে বললেই হতো।’
ছাত্রলীগ পরিবারের কথা বাইরে না নিয়ে নিজেদের মধ্যে রাখলেই ভালো হতো বলে মনে করেন ওয়ালী। তিনি ও সাদ্দাম সমাবেশে ১৪ থেকে ১৫ মিনিট করে বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে একে ‘দীর্ঘ বক্তব্য’ বলা যায় কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন ওয়ালী।
হল কমিটিতে কেন্দ্রকে ‘ভাগ’ না দেওয়ার যে ইঙ্গিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা দিয়েছে, সে বিষয়ে ওয়ালী বলেন, ‘হল কমিটি বানরের রুটি ভাগের মতো কোনো বিষয় নয়। হল কমিটিতে ভাগাভাগি হয়, এমন কোনো বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই শীর্ষ নেতার এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পরামর্শ গ্রহণ করার রেওয়াজ রয়েছে।’
মাজহারুল-তানভীরের পক্ষ থেকে সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ দাবি প্রসঙ্গে ওয়ালী বলেন, সাত কলেজের ইস্যুটি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে মীমাংসিত বিষয়। গঠনতন্ত্রের সংশোধন চাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু সেই দাবি যথাযথ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় সংসদের কাছে না করে গণমাধ্যমে করার কারণটি বোধগম্য নয়।
মাজহারুল-তানভীরের স্থায়ী বহিষ্কারের ক্ষমতা দাবির বিষয়ে ওয়ালী বলেন, ‘এটি যে কেউ দাবি করতে পারেন। আমরা সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করতে চাই। যৌক্তিক বিবেচনা সাপেক্ষে বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবগত হওয়াটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। যথাযথ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় সংসদের কাছে এই দাবি না জানিয়ে পত্রপত্রিকায় জানানোটা বিব্রতকর।’
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সঙ্গে এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো, সে বিষয় বুঝতে পারছেন না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সব ইউনিট মিলে ১ সেপ্টেম্বর আমরা একটা সার্থক সমাবেশের কর্মসূচি করলাম। সারা দেশে এ নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও খুশি। একটি সফল কর্মসূচির পর কেন এ ধরনের পরিস্থিতির অবতারণা করা হলো, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ পরিবার। এখানে ভুল-বোঝাবুঝি থাকতেই পারে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে আলোচনা না করে ঘরের বাইরে সমাধান প্রত্যাশা করা যৌক্তিক কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।’