‘সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলাচিঠি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন দুটি। আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে
‘সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলাচিঠি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন দুটি। আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান চেয়ে ড. ইউনূসকে খোলাচিঠি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলাচিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এর মধ্যে ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চান তাঁরা।

‘সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলাচিঠি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন দুটি। আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন দুটি এই খোলাচিঠি তুলে ধরে।

সংবাদ সম্মেলনে খোলাচিঠি পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার এই আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রাম বাংলাদেশে জাগরণের যে চেতনা প্রজ্বলিত করেছে, তা যেন কখনো কেউ নিভিয়ে দিতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধ যেন পথ না হারায়। এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচার তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনে কালিমা লেপন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।’

প্রাপ্ত সাংগঠনিক বিবরণ ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে অন্তত ৫২টি জেলায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে বলেও খোলাচিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক নারী নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চাই।’

রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্রনেতৃত্ব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে এ অবস্থা জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে খোলাচিঠিতে বলা হয়েছে, ‘তাঁরাও তাঁদের বক্তব্য-ভাষণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আর্তনাদ প্রলম্বিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সূচনালগ্নেই আপনার কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে আমাদের উদ্বেগ ও বেদনার জায়গাটি তুলে ধরছি এই প্রত্যাশায় যে আপনি ও আপনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, যাতে ছাত্র-জনতার বিজয় কলুষিত না হয় এবং ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই রক্তক্ষরণের অবসান ঘটে।’

এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ। এক প্রশ্নের জবাবে কাজল দেবনাথ বলেন, দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

৫ আগস্ট থেকে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ। এ সময় তিনি গত চার দিনে সংঘটিত সব সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জে এল ভৌমিক প্রমুখ।