সাক্ষাৎকার

শান্তিপূর্ণ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল চায় অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিম ওয়াটস প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমকর্মীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।

টিম ওয়াটস
ছবি: প্রথম আলো

অস্ট্রেলিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিম ওয়াটস বাংলাদেশের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গির (আইপিও) প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, ভারত মহাসাগর হবে এমন একটি অঞ্চল, যেখানে কোনো দেশ অন্য দেশের ওপর কর্তৃত্ব করবে না। এই অঞ্চলের একটি দেশও আধিপত্যবাদের শিকার হবে না।

টিম ওয়াটস গত রোববার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমকর্মীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা–বাণিজ্য, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। গত শুক্রবার দুই দিনের ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে অংশ নিতে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন।

গত মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গিকে (আইপিও) স্বাগত জানিয়ে টিম ওয়াটস বলেন, অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন হলো ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল হবে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধিশালী, সহনশীল যা আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে চলবে। কৌশলগত দিক থেকে এই অঞ্চল হবে ভারসাম্যমূলক। এই অঞ্চলের দেশগুলো নিজেরাই নিজেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যেখানে সকল দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হবে। এ ধরনের একটি অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব দেশের সমানভাবে অবদান রাখতে হবে। তাই বাংলাদেশের আইপিওতে সবার অংশগ্রহণের যে বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সাযুজ্য আছে। আমরা বাংলাদেশের এই অবস্থানকে স্বাগত জানাই।

জ্বালানি খাতে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সক্ষমতা বাড়ানোসহ নানা স্তরে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়ার মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিম ওয়াটস বলেন, কয়লার পাশাপাশি সৌরবিদ্যুতের মতো নানা ধরনের জ্বালানির উৎসের মাধ্যমে যথেষ্ট ভাগ্যবান অস্ট্রেলিয়া। এ ছাড়া আমাদের বিপুল পরিমাণ বায়ুবিদ্যুৎ এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নবায়নযোগ্য জ্বালানিও রয়েছে। সূর্য থেকে বিপুল পরিমাণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বড় পরিসরে এগিয়েছি। আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় অংশ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদন। এই মুহূর্তে বিশ্বের অনেক দেশের কাছে একটি পরিবেশবান্ধব ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিবেশবান্ধব জ্বালানির চাহিদা পূরণ এবং বিশেষজ্ঞদের তৈরি করার মাধ্যমে আমরা অংশীদার হতে আগ্রহী। আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেনের চাহিদা মেটানোর সুযোগ আছে।

সরকারি পর্যায়ে জ্বালানি খাতে সহযোগিতা চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকা সফর করেছেন। এ সময় নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। জ্বালানি খাতে দুই দেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্রে সফরটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

দুই দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগে বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে টিম ওয়াটস বলেন, গত বছর দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল তিন দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগের পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা, জ্বালানিসহ নানা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখি। বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশেষ করে কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে দুই দেশ একে অন্যের পরিপূরক হতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাকের বড় উৎস অস্ট্রেলিয়ার তুলা। আমরা বাংলাদেশে আরও বিপুল পরিমাণ তুলা রপ্তানি করতে আগ্রহী।

টিম ওয়াটস জানান, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশকে মানবিক সহায়তা দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় অস্ট্রেলিয়া ৪৮০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে যাবে, এটাই অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাশা। তবে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ জন্য মিয়ানমারকে সেখানে কাজ করতে হবে।