আজ থেকে ১৯৮ বছর আগে ফারসি ভাষায় লেখা কাবিননামা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে স্থান পেয়েছে এই প্রাচীন দলিল
আজ থেকে ১৯৮ বছর আগে ফারসি ভাষায় লেখা কাবিননামা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে স্থান পেয়েছে এই প্রাচীন দলিল

যা লেখা আছে ১৯৮ বছর আগের কাবিননামায়

১৮২৬ সালের ৯ মার্চ। আজ থেকে প্রায় ১৯৮ বছর আগের কথা। ওই দিন বেশ আয়োজন করে বিয়ে করেছিলেন মীর আমানি ওরফে মীর খান নামের এক ব্যক্তি। তৎকালীন ইসলামাবাদের ফতেহাবাদের (বর্তমানে হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ) মীর মদনের ছেলে ছিলেন তিনি। পাশের এলাকা ফতেপুরের মুছাম্মৎ লুতফুন নিসা বিনতে খোন্দকার মুনিরুদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর।

১৯৭৬ সালে এই বিয়ের কাবিননামা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে জাদুঘরের আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ গ্রন্থাগারে রাখা রয়েছে এটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটি কিনেছিল ৩০ টাকায়। তবে এটি কার কাছ থেকে কেনা হয়েছিল, এ তথ্য জানা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী এই কাবিননামার লিপিকর ছিলেন ছৈয়দ মোহাম্মদ বাছের।

৬২ সেন্টিমিটার লম্বা আর ২০ সেন্টিমিটার প্রস্থের নথিটিতে তারিখও উল্লেখ রয়েছে। নথি অনুযায়ী দিনটি ছিল হিজরি সন ১২৪১–এর ২৯ রজব অর্থাৎ ১৮২৬ সালের ৯ মার্চ। সে অনুযায়ী এটির বয়স প্রায় ১৯৮ বছর। ৩৪ লাইনের এই কাবিননামা লেখা হয়েছিল ফারসি ভাষায়। পরে ২০১৫ সালে এই কাবিন নামা বাংলায় অনুবাদ করেন বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো হাফিজ মাহবুবুর রহমান। বর্তমানে তাঁর অনুবাদসহ নকল একটি কাবিননামা জাদুঘরের দ্বিতীয়তলায় প্রদর্শনীর জন্য রাখা রয়েছে।

প্রায় দুই শ বছরের পুরোনো এই বিয়েতে কনে যেসব শর্ত দিয়েছিলেন, তাতে বোঝা যায় তিনি নিজের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। বিয়ের পর স্বামী কী করতে পারবেন এবং পারবেন না, তা–ও উল্লেখ আছে কাবিননামাটিতে।

বিয়ের জন্য কনের চার শর্ত

কাবিননামায় বিয়ের পাঁচজন সাক্ষীর সই রয়েছে। ১৮০ টাকা মূল্যের সাত ভরি সোনা, নগদ ১০০ টাকা এবং ১০০ টাকা মূল্যের দুই কানি জমি দেনমোহর হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এসব জমির নকশার বর্ণনাও কাবিননামায় উল্লেখ আছে। পাশাপাশি চারটি শর্তও সেখানে রয়েছে। অর্থাৎ মীর আমানি ওরফে মীর খানকে মুছাম্মৎ লুতফুন নিসা চারটি শর্ত দিয়ে বিয়ে করেছিলেন। শর্ত মেনে নিয়ে বর মীর আমানি তাতে সইও করেছেন।

এর মধ্যে প্রথম শর্ত হলো স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। করলেও তা প্রকাশ করতে হবে এবং ওই বিয়ে বাতিল গণ্য হবে। এ জন্য স্বামীকে স্ত্রীর কাছে ক্ষমাও চাইতে হবে।

জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রাখা কাবিননামার নকল ও বাংলা অনুবাদ রাখা হয়েছে

দ্বিতীয় শর্তে আছে, স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দূর প্রবাসে যাবেন না স্বামী। তবে তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে যাওয়া যাবে। যাওয়ার আগে স্ত্রীর সব খরচ, প্রয়োজনীয় পোশাক ও নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করে যাবেন স্বামী।

কাবিননামার তৃতীয় শর্তে মোহরানার কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্ত্রীর জন্য ধার্য করা মোহরানার স্বর্ণালংকারের তিন ভাগের একাংশ নগদ দিতে হবে। বাকি দুই অংশ বিয়ের পরে বিনা আপত্তিতে দিতে হবে। স্ত্রীর জন্য যে জমি বরাদ্দ হয়েছে, তার দখলও বুঝিয়ে দেবেন স্বামী। ওই সম্পত্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খাজনা ও খরচ স্বামী দেবেন এবং ওই সম্পত্তিতে স্বামীর কোনো দাবি থাকবে না।

চতুর্থ শর্তে উল্লেখ রয়েছে, স্ত্রী তাঁর মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের দেখাশোনা করায় জন্য যেতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। সন্তুষ্টচিত্তে খরচ দিয়ে পাঠাবেন স্বামী।