প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেস্তোরাঁর নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করতে কমিটি করবে সরকার

রেস্তোরাঁর নিবন্ধন ও লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সহজ করা যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ করতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই কমিটি রেস্তোরাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়েও সরকারকে পরামর্শ দেবে। ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, অগ্নিঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা বলে রেস্তোরাঁগুলোতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ঢালাও অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়া রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হবে না—এমন আশ্বাস সভা থেকে ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হন। ওই ভবনে ৮টি রেস্তোরাঁ ছিল। এরপর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যে যার মতো করে অভিযান শুরু করে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হন। ওই ভবনে ৮টি রেস্তোরাঁ ছিল। এরপর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যে যার মতো করে অভিযান শুরু করে। অন্যদিকে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নিবন্ধন ও লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র জানায়, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নিবন্ধন ও লাইসেন্স পেতে কী কী জটিলতায় পড়তে হয়, সে বিষয় তুলে ধরা হয়। সরকারের কত সংস্থার নিবন্ধন লাগে, সেসব নিবন্ধন পেতে কী কী কাগজপত্র লাগে, তা উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি রেস্তোরাঁ খাতে বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে এর অবদানের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি নিবন্ধন ও লাইসেন্সপ্রক্রিয়াকে সহজ করা এবং অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি জানায়।

বর্তমানে একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হয়।

সভায় অংশ নেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি ২৪ মার্চ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সংস্থা তদারকির দায়িত্বে থাকলে কোনোটাই যথাযথভাবে হয় না। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে নিবন্ধন ও লাইসেন্সের জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে না ঘুরে এক জায়গা থেকে পুরো কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রেস্তোরাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সভায় একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটিতে সরকারি সংস্থা ছাড়াও এফবিসিসিআই ও রেস্তোরাঁর মালিকদের প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেবে। শিগগিরই কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে আশা করছেন তিনি।

বর্তমানে একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় থেকে নিবন্ধন (অনুমতি) ও ব্যবসার লাইসেন্স (সনদ) নিতে হয়। পাশাপাশি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয় একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে।

দেশের সব রেস্তোরাঁ সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ইমরান হাসান, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব

সভায় উপস্থিত একটি পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রেস্তোরাঁগুলোকে আইনি কাঠামোতে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অভিযানে গিয়ে ঢালাও বন্ধ না করে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রেস্তোরাঁর অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত কীভাবে করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর রেস্তোরাঁর নিবন্ধন ও লাইসেন্সপ্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়ে সবাই একমত হন।

সভা সূত্র জানায়, সরকারের কোনো সংস্থা হঠাৎ অভিযান চালিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবে না—এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে রেস্তোরাঁর মালিকদের। তবে নিয়মিত অভিযানে যাদের নিরাপত্তায় ঘাটতি পাওয়া যাবে, তাদের সতর্ক করা হবে। ঝুঁকিমুক্ত করতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর যেসব রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়েছে, সেগুলোও পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সব রেস্তোরাঁ সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সরকার এখন বলছে, নিবন্ধন ও লাইসেন্সপ্রক্রিয়া সহজ করা হলে অনেক সমস্যার নিরসন হবে। একই সঙ্গে রেস্তোরাঁগুলো ঝুঁকিমুক্ত করার কাজও হবে।