সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে (১৫ বছর) গুমের সব অভিযোগ তদন্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ১০ দিন নিজের গুমের শিকারের কথা উল্লেখ করে সোমবার এই অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী এনামুল কবির।
এনামুল কবির নামের ওই ব্যবসায়ীকে ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁর রাজধানীর বাসাবোর ব্যবসায়িক কার্যালয় থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে জানান ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এক ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ডিবির তৎকালীন কর্মকর্তা মশিউরের নির্দেশে এনামুল কবিরকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁকে চোখ বন্ধ করে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখে। পরে ২৬ নভেম্বর তাঁকে ছেড়ে দেয়। হাত–পায়ের মাঝখানে লাঠি ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। নির্যাতন করে তাঁর কাছ থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের তথা বিশেষ করে জামায়াতের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তাঁর অফিস থেকে বিস্ফোরকসদৃশ বস্তু উদ্ধার হয়েছে বলে মামলা করে। সে মামলায় কয়েক দিন জেল খাটার পর তিনি জামিন পান। ১৭ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত বেআইনিভাবে গোপনে আটকে রাখায় তিনি শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগটি করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তাঁর (এনামুল কবির) নিজের ঘটনাটি উল্লেখ করে একই সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যত গুমের ঘটনা হয়েছে, তার তদন্ত চেয়েছেন। যাচাই-বাছাই করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইয়ামিনের মৃত্যু, শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সাভারে পুলিশের সাঁজোয়া যান (এপিসি) থেকে ফেলে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। নিহত ইয়ামিনের মামা অভিযোগটি দাখিল করেন।
ওই অভিযোগটি রোববার বিকেলে জমা পড়ে বলে জানান তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই সাভারে এপিসি থেকে গুলি করে একটি ছেলেকে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়। তিনিই এমআইএসটির ছাত্র ইয়ামিন।
অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, পুলিশ যখন নির্বিচার ছাত্র আন্দোলনকারীদের গুলি করছিল, তখন ইয়ামিন সাহসী ভূমিকা নেন। পাশ থেকে লাফিয়ে উঠে এপিসির ঢাকনাটা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন, যাতে এপিসি থেকে গুলি করে ছাত্রদের হত্যা না করতে পারে। তিনি যখন এপিসির ওপরে উঠে যান, তখন দুজন পুলিশ এসে তাঁকে গুলি করেন। পরে এপিসির ভেতর থেকে আরেকজন পুলিশ উঠে তাঁর বুকে সরাসরি গুলি করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে এপিসির ওপরে নিয়ে অনেকক্ষণ আন্দোলনকারীদের আশপাশে ঘুরে বেড়ায় পুলিশ। একপর্যায়ে কোনোরকম মানবিকতা প্রদর্শন না করে জড়বস্তুর মতো তাঁকে এপিসি থেকে রাস্তার ওপর ফেলা হয়। এতে তিনি মাথায় আঘাত পান। ভিডিওতে দেখা যায়, এ অবস্থায়ও তাঁর নিশ্বাস চলছিল। অনেকক্ষণ তাঁকে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। একটু পরে দুজন পুলিশ সদস্য এসে তাঁকে আবার টেনেহিঁচড়ে সড়ক বিভাজকের পাশে ফেলে রাখেন। আরও কিছুক্ষণ পরে তাঁকে দুজন পুলিশ সদস্য চ্যাংদোলা করে সড়ক বিভাজকের এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিক্ষেপ করেন। তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পরে পুলিশ আবারও ইয়ামিনের পায়ে গুলি করে।…তারপর আবার তাঁর বুকের ওপরে একটি টিয়ার শেল মারে।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আহত অবস্থায় ইয়ামিনকে দ্রুত সাভারের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের ফটকে পানি চান, তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে চিকিৎসা দেয়নি। তাঁর জন্য ফটকটা পর্যন্ত খোলেনি। এক ঘণ্টা ফেলে রেখেছিল, চিকিৎসা ছাড়া। পরে অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়, ততক্ষণে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পরে তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে দেননি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।