ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলাকে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই বলে মনে করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। তারা বলছে, সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর রাজনৈতিক স্বার্থে হামলা হয়েছিল। কিছু সুযোগসন্ধানীও এই হামলায় যোগ দিয়েছিল।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মঠ, মন্দির, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের প্রতিবেদন প্রকাশ; আসামিদের গ্রেপ্তার, শাস্তি বিধান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রস্তাব পেশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে তাদের জন্য জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন রাখতে হবে। সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে কোনো দলই হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার পতনের পর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষয়ক্ষতির যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তা সঠিক বলে মনে করে হিন্দু মহাজোট। তবে হিন্দু মহাজোট নিজেরাও কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই হিসাব তুলে ধরে হিন্দু মহাজোটের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৬ আগস্ট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩২টি সাধারণ হিন্দু পরিবার হামলার শিকার হয়েছে, যারা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। প্রায় এক হাজার পরিবার চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ৪৩টি অরক্ষিত মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ১৩২টি সাধারণ হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনাগুলো সাম্প্রদায়িকও না, আবার রাজনৈতিকও না। জমিজমা নিয়ে বিরোধ, পূর্বশত্রুতার জেরে এই সুযোগে হামলা করা হয়েছে।
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের দাবি, আওয়ামী লীগ যখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়, তখনই সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে আসে। আগেও দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতারাই মন্দিরে হামলা করে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন। এবার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সময় তিনজন ধরা পড়েছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর হাতেনাতে ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে যারাই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করুক না কেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন তিনি।