বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেছেন, ‘২০১৩ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জনগণের সরকার ক্ষমতায় এলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। আমরা বলতে চাচ্ছি, চব্বিশের গণ-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এখনই জনগণের সরকার ক্ষমতায় আছে। এখনই শেখ হাসিনার এই মুজিববাদী, ফ্যাসিবাদী সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে।’
আজ শনিবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ কলেজ মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন আবদুল হান্নান। ডা. মোস্তফা হাজেরা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা ও সম্মাননা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘আমরা যখন বলি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা বারবার সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে এ দেশের মানুষের ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার, কেড়ে নিয়েছেন। এ দেশের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। সেই সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চব্বিশের তরুণদের হাত ধরে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ নিয়ে নতুন সংবিধান রচনা করা হবে। তখন অনেকে বলেন, ফ্যাসিবাদী সংবিধানের কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া করা যাবে না। ফ্যাসিবাদের এই সংবিধান নাকি ছুড়ে ফেলে দেওয়া যাবে না, এতে সংবিধানের অমর্যাদা হয়। আমি বুঝতে পারছি না, ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই সংবিধানের প্রতি এত দয়া, মায়া বা মমত্ব কিসের।’
ফ্যাসিস্টদের প্রতি যারা মায়া ও দরদ দেখাচ্ছে, তারা রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়ে না বলে মন্তব্য করেন আবদুল হান্নান মাসুদ। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল, তাদের রাজনীতি করার অধিকার দিতে হবে, তাদের ভোটাধিকার দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক দল হয়, তবে গত ১৬ বছর কেন এ দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার দেয়নি? তারা রাজনৈতিক দল হয়ে থাকলে কেন আমার দুই হাজারের বেশি ভাই-বোনকে হত্যা করেছে? কেন ১৬ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে? সন্ত্রাসী এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য ধরতে না পারলে আমরা বুঝে নেব, আপনারাও রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়েন না। সন্ত্রাসীরা আজীবনের জন্য সন্ত্রাসী। কোনো সন্ত্রাসী ভবিষ্যতে এ দেশের মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রী হতে পারবেন না। সন্ত্রাসী আর রাজনৈতিক দল কখনো এক হতে পারে না।’
আবদুল হান্নান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর তরুণেরা যে স্বপ্ন দেখছেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজ একটি পক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইতিহাসের পাতায় যদি শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করে রাখতে হয়, তবে আগে তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। বইয়ের কাগজে আমরা শহীদদের নাম যেভাবে দেখতে চাই, যেভাবে পত্রিকার পাতায় দেখতে চাই, ঠিক একইভাবে আমরা দেখতে চাই দুই যুগ পর যেন দেশের মানুষ বলতে পারেন, চব্বিশের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সুন্দর এই বাংলাদেশ পেয়েছি।’
ডা. মোস্তফা হাজেরা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী, ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা গোলাম মর্তুজা, জহিরুল ইসলাম, সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম, বনী ইয়ামিন, ফরহাদুল ইসলাম প্রমুখ।