গ্রামবাংলার আখ্যান, পৌরাণিক গল্প নির্ভর যাত্রাপালায় এখন আর আসে না প্রত্যাশিত দর্শক
গ্রামবাংলার আখ্যান, পৌরাণিক গল্প নির্ভর যাত্রাপালায় এখন আর আসে না প্রত্যাশিত দর্শক

বিশ্লেষণ

নগরকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির চর্চা কোন পথে?

যাত্রাপালা, নবান্ন উৎসব, পুতুলনাচ বা লাঠিখেলার মতো গ্রামবাংলার উৎসব এখন নগরকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এখন গ্রামবাংলার আখ্যান, ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক গল্পনির্ভর যাত্রা করা যায় না। খোলা মাঠের লাঠিখেলা হয় মঞ্চে। নবান্ন উৎসব হয় চারুকলার বকুলতলায়। বদলে যাচ্ছে পুতুল নাচের গল্প ও চরিত্র। গ্রামবাংলার এসব ঐতিহ্য সংরক্ষণে সরকার ও বুদ্ধিজীবী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

যাত্রাপালা, পুতুলনাচ অথবা নবান্ন উৎসবের মতো লোকসংস্কৃতির চর্চা একসময় গ্রামবাংলায় বেশি দেখা যেত। এখন এসবের চর্চা নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। বদলে যাচ্ছে পুতুলনাচে চরিত্রের নাম, পোশাক ও গল্প।

মাঠের লাঠিখেলার অধিকাংশ হয় মঞ্চে। দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকার পর যাত্রাপালা হচ্ছে সীমিত পরিসরে। লোকসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত গ্রামের শিল্পীরা বলছেন, নগরকেন্দ্রিক চর্চায় তাঁদের বিশেষ লাভ নেই। নিজেদের জীবিকা ধরে রাখতে পারছেন না তাঁরা।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্পী, সংগঠক ও গবেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলছেন, নগরেও লোকশিল্পের চর্চা প্রয়োজন আছে। তবে শিল্পীদের রক্ষা করতে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

বিষয় বদলেছে যাত্রাপালার

ষাটের দশকে ধানসিঁড়ি ও কীর্তনখোলা নদীতে ঝলমলে বড় একটা নৌকা চলাচল করত। সেই নৌকার নাম ছিল ধলেশ্বরী অপেরা। নৌকার ভেতরে চলত মহড়া। শিল্পীরা বায়না নিয়ে নৌকায় চড়ে যেতেন বিভিন্ন জায়গায়। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি শিল্পী মিলন কান্তি দে সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, কোথায় সেই সব দিন! শুধু কি যাত্রা? বাংলার লোকসংস্কৃতির অধিকাংশই এখন শহুরে মানুষের শখের উৎসব হয়ে যাচ্ছে।

প্রবীণ এই শিল্পী বলেন, আগে যাত্রার বায়না করতেন সমাজের সম্মানীয় মানুষেরা। পরে তা চলে গেল ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের হাতে। তাঁরাই যাত্রায় অশ্লীলতা এনেছেন। অশ্লীলতার অভিযোগে নব্বইয়ের দশকে টানা কয়েক বছর যাত্রা নিষিদ্ধ ছিল। সেই ক্ষতি আর কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আবার যাত্রাশিল্পকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে।

লোকশিল্পীর জীবিকা ও শিল্পসংরক্ষণ নিয়ে কথা হয় শিক্ষক যতীন সরকারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লোকসংস্কৃতি শুধু গ্রামের, তা নয়। নগরের মানুষেরও সংস্কৃতি আছে। সব সংস্কৃতিই পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়। কাজেই লোকসংস্কৃতিরও পরিবর্তন হচ্ছে। তবে লোকসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যে নিজেদের পেশায় থাকতে পারছেন না, সেদিকটায় নজর দিতে হবে। এই দায়িত্ব সরকার ও বুদ্ধিজীবীদের।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিবন্ধিত যাত্রাপালা দলের সংখ্যা ১৭৮। নরসিংদী, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের যাত্রাশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নিবন্ধিত হলেও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এলাকায় যাত্রাপালা করা যায় না। অনুমতি পাওয়া বিস্তর ঝামেলার। ফলে শুধু শিল্পকলার আয়োজনে অনুষ্ঠান হলে তাদের পালা হয়। সেখানে আবার নির্দিষ্ট বিষয়ের বাইরে পালা করা যায় না। চাইলেই গ্রামবাংলার আখ্যান, ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক গল্পনির্ভর যাত্রা করা যায় না।

আমন ধানে নির্ভরতা কমেছে কৃষকের। নবান্ন উৎসব হয়ে উঠছে নগরকেন্দ্রিক চর্চা

অবশ্য এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’, ‘কলঙ্কিনী বধূ’, ‘মাটি মায়ের ছেলে’র মতো পুরোনো দিনের কয়েকটি পালা মঞ্চস্থ করেছে ‘মাতা মঞ্জুলিকা দেবী অপেরা’র মতো কয়েকটি দল। কিন্তু প্রত্যাশিত দর্শক পাওয়া যায়নি। শিল্পীরা মনে করেন, প্রযুক্তিগত বিনোদনব্যবস্থার কারণেও যাত্রাপালা নিয়ে মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে।

ঝালকাঠির ‘মাতা মঞ্জুলিকা দেবী অপেরা’র মালিক সুমতী রানী ব্যাপারী (৯০) আজীবন শুধু যাত্রাপালাই করেছেন। এখন তাঁর ছেলে যাত্রাশিল্পী উজ্জ্বল কুমার ব্যাপারী দলের দেখাশোনা করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একসময় বছরে ২০০টির বেশি পালা করতেন। এখন ২৫ থেকে ৩০টি পালা করতে পারেন। ফলে জীবিকা হিসেবে শিল্পীরা এই পেশা ধরে রাখতে পারছেন না।

আশি ও নব্বইয়ের দশকের দাপুটে যাত্রাশিল্পী গোপালগঞ্জের পূরবী দত্তও একই কথা বললেন। তিনি জানান, ‘দর্শক যখন টিকিট কেটে যাত্রা দেখতেন, তখন আমরা দিনে ঘর থেকে বের হতাম না। মনে হতো, শিল্পীর হুটহাট সব জায়গায় যাওয়া উচিত না। এখন মানুষ কি টিকিট কেটে যাত্রা দেখতে আসেন? আমরাও জীবিকার প্রয়োজনে হাটে–মাঠে ঘুরি। যাত্রা এখন মঞ্চনাটকের মতো হয়ে হচ্ছে।’

জেলাভিত্তিক যাত্রাপালার দল সবচেয়ে বেশি মানিকগঞ্জ ও যশোরে। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিল যাত্রাশিল্পের সবচেয়ে বেশি চর্চা।

নগরে নবান্ন উৎসব

যাত্রাপালার মতো গ্রামবাংলার ফসলনির্ভর আরেকটি প্রাচীন উৎসব ‘নবান্ন’। কৃষিনির্ভর এই উৎসব এখন গ্রামের চেয়ে নগরে বেশি উদ্যাপিত হয়।

নবান্ন বাঙালির প্রধান ফসল ধান কাটার ক্ষণ। আমন ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কতশত বছর আগে এই উৎসব চালু হয়েছে, তা বলা কঠিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘জননী, তোমার শুভ আহ্বান/গিয়েছে নিখিল ভুবনে/নূতন ধান্যে হবে নবান্ন/তোমার ভবনে ভবনে।’

একসময় গ্রামের বধূরা বাপের বাড়িতে নাইওর যেতে নবান্ন উৎসবের অপেক্ষায় থাকতেন। এখন ফসলের মাঠ থাকলেও গ্রামে ম্লান হয়েছে নবান্ন উৎসব। আমনের ওপর কৃষকের নির্ভরতা কমেছে, সেই জায়গা দখল করেছে উচ্চফলনশীল ইরি-বোরো। ধানমাড়াই হয় এখন যন্ত্রে। সব মিলিয়ে সেই উৎসবের রমরমা নেই। তবে অসাম্প্রদায়িক সেই উৎসব এখন উদ্যাপিত হয় নগরে।

প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গত ১৬ ও ১৭ নভেম্বর বর্ণিল নবান্ন উৎসব হয়েছে। এই আয়োজনে উপস্থিত হন গ্রামের গুটিকয়েক কৃষক ও পিঠা বানানোর জন্য নারী। তবে তাঁদের উপস্থিতি এই নগর আয়োজনে কখনো মুখ্য হতে পারেনি। যেমনটা একসময় হতো তাঁদের নিজেদের বাড়ির উঠানে।

নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট মানজার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরের শিশুরা বিদেশি খাবার চেনে। কিন্তু তারা জানে না, দাদি-নানিরা রাত জেগে কত সুন্দর পিঠা তৈরি করতেন। প্রতিবারই আমরা গ্রাম থেকে কয়েকজন কৃষক ও পিঠা বানানোর জন্য নারীদের নিয়ে আসি। এটি মেলবন্ধনের এক প্রচেষ্টা।’

সংস্কৃতির পরিবর্তনের এ ধারা যে নতুন নয়, তা শ্রী দীনেন্দ্রকুমার রায়ের ১৩১২ সালে লেখা ‘নবান্ন’ প্রবন্ধে পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ‘নবান্ন উৎসব না করলে অন্যায় হয় বলে মনে করতেন প্রাচীন মানুষেরা। এ দৃশ্য পূর্ব্বে আমাদের পল্লী অঞ্চলে বিরল ছিল না; কিন্তু আজকাল ইংরাজী-শিক্ষার বিস্তারে আমাদের উৎসবানুরাগ অনেক পরিমাণে শীতল হইয়া আসিয়াছে।’

এভাবে শীতল হয়ে এসেছে বাংলার লোকসংস্কৃতির আরও অনেক কিছু। গ্রামবাংলার একসময়ের দাপুটে লাঠিখেলা এখন খোলা মাঠের চেয়ে নগরের মঞ্চে বেশি আয়োজিত হয়।

লাঠিখেলা উৎসব

গ্রামে লাঠি খেলা হতো খোলা জায়গায়। দর্শক থাকত সবাই

গ্রামবাংলায় কবে লাঠিখেলা উৎসবের চল শুরু হয়েছিল, তার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ নেই। শিকারের পর্ব থেকে শুরু করে ভূস্বামী, জমিদার বা ব্রিটিশ শাসনের সময় লাঠিয়াল বাহিনী তৈরির ইতিহাস আছে। আত্মরক্ষার তাগিদে শুরু হলেও সেই লাঠিখেলাই হয়েছে একসময় গ্রামবাংলার খেলা। তাই লাঠিখেলার ধরন সম্পর্কে জানতে গেলে দেখা যায়, সেখানে আছে ঘাত, বিঘাত, সমঘাতের মতো আঘাতের নাম। তবে শত বছর ধরে গ্রামবাংলায় নিছকই আনন্দোৎসব হিসেবে লাঠিখেলা আয়োজিত হয়।

ইউনেসকোর ভার্চু৵য়াল পাঠাগারের ২০১৭ সালে প্রকাশিত সুদীপ চক্রবর্তী এবং সাইদুর রহমানের লেখা ট্র্যাডিশনাল গেমস অব বাংলাদেশ বই থেকে জানা যায়, ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ আমলে ‘অল বেঙ্গল স্টিক চ্যালেঞ্জ শিল্ড, কুষ্টিয়া’ নামে একটি রুপার শিল্ড লাঠিখেলা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ভারতবর্ষে সেটিই ছিল প্রথম কোনো লাঠিখেলা টুর্নামেন্ট। পরের বছর গঠন করা হয় ‘নিখিল বঙ্গ লাঠিয়াল সমিতি’। স্বাধীনতার পর সেই দলের নাম হয় ‘বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী’। এর কেন্দ্রীয় দপ্তর এখনো কুষ্টিয়ায়।

এ দলটি শহর ও গ্রামে লাঠিখেলার আয়োজনের চেষ্টা করছে। বংশপরম্পরায় এখন এই দলের দায়িত্বে আছেন রূপন্তী চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে রাজধানীতে তাঁরা লাঠিখেলার আয়োজনে করেন। তিনি বলেন, লাঠিখেলা রীতিমতো শিল্প, যেখানে খেলার নিয়মনীতির সঙ্গে আছে নানা বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। আছে লড়ি, কাঠিনৃত্য, লাঠিনৃত্যর উপস্থিতি।

নবান্ন উৎসবসহ নানা আয়োজনে এখন নগরে লাঠিখেলার চর্চাও হয়। এখন গ্রামে আর এই খেলার রমরমা নেই। কুষ্টিয়ার বটতলা ইউনিয়ন লাঠিয়াল দলটি পরিচালনা করেন অর্পণ মাহমুদ। তিনি জানান, গ্রামবাংলায় লাঠিখেলা হয় খোলা জায়গায়। শহরে হয় মঞ্চে। এই খেলা দেখার দর্শকের মধ্যেই আছে ব্যবধান। গ্রামে সবাই দর্শক। শহরের দর্শক নির্দিষ্ট শ্রেণির।

লাঠিখেলা জীবিকা হিসেবে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে পারেনি। তবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ ছিল বহু শিল্পীর জীবিকা। সেই জীবিকাও এখন ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

পেশা ছাড়ছেন পুতুলনাচের শিল্পীরা

পেশা ধরে রাখতে পারছেন না পুতুল নাচের শিল্পীরা। বদলে যাচ্ছে পুতুলের নাম, পোশাক, চরিত্র

কুষ্টিয়ার পুতুলনাচের প্রবীণ শিল্পী মো. আবদুল কুদ্দুসের ‘মনোহারা’ পুতুলনাচের দলের বয়স ৪০ বছর। গত অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাবনা ও কুষ্টিয়ায় ২০টি পুতুল নিয়ে দুটি শো করেছেন। সঙ্গে ছিলেন দলের আরও ১৫ সদস্য। সব মিলিয়ে আবদুল কুদ্দুস পেয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। প্রথম আলোকে বললেন, ‘এই টাকা ১৬ দিয়ে ভাগ করেন। সঙ্গে আছে পুতুল বানানোর খরচ। বছরে এমন ১০–১২টা খেলা দেখাতে পারি। টিকে থাকব কেমন করে?’

বাংলাদেশের পুতুলনাচের কথা বলতে গেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধন মিয়ার প্রসঙ্গ আসবেই। ‘রয়েল বীণা অপেরা’ নামে তিনি শুরু করেছিলেন পুতুলনাচের দল। মুক্তিযুদ্ধের পর রাজধানীতে এক মেলায় মাসব্যাপী পুতুলনাচ দেখিয়েছিল এই দল।

আর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শরণার্থীশিবিরে ‘পুতুলনাট্য’ দেখিয়ে শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি পুতুলে আনলেন পারুল, বাউল ও ষাঁড়কে। তিনি এই পুতুলনাচের মধ্য দিয়ে গ্রামবাংলার আবহমান সংস্কৃতিকে তুলে আনতে চেয়েছিলেন।

এখন নগরের পুতুলনাচে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন উপাদান। বদলে যাচ্ছে পুতুলনাচের গল্প ও চরিত্র। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আয়োজন করছে পাপেট শোর। ঢাকা পাপেট থিয়েটার এবং জল পুতুলের মতো নাগরিক দলগুলো গবেষণার মাধ্যমে আনছে নতুন নতুন পুতুল। এমন একটি পুতুলের নাম ‘বুনরাকু’। জাপানি এই পুতুল নিয়ে এখন কাজ চলছে বলে জানালেন ঢাকা পাপেট থিয়েটারের পরিচালক আর্থার ব্যাপ্টিস্ট।

পুতুল নাটক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো তাদের আদি রূপের পুতুল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংরক্ষণ করে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় আদি রূপের পুতুল সংরক্ষণের পাশাপাশি এই শিল্প নিয়ে গবেষণার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একাডেমি বানিয়েছে। আমাদের দেশে এই উদ্যোগ শুরু হলেও ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো পুতুল।’

সংস্কৃতির এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছেন গোপালগঞ্জের গোলক বালার মতো পুতুলনাচের শিল্পীরা। ফরিদপুরে পল্লিকবি জসিমউদ্দীন এবং যশোরে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িতে তাঁর বানানো পুতুল আছে। এই শিল্পী গত ঈদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুরে পুতুলনাচ দেখানোর পর আর কাজ পাননি। ‘কমলার বনবাস’, ‘আলোমতি-প্রেম কুমার’, ‘রহিম-রূপবানের’ মতো  জনপ্রিয় পালা করা শিল্পী বাধ্য হয়ে পেশা ছেড়েছেন।

লোকশিল্পীর জীবিকা ও শিল্পসংরক্ষণ নিয়ে কথা হয় শিক্ষক যতীন সরকারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লোকসংস্কৃতি শুধু গ্রামের, তা নয়। নগরের মানুষেরও সংস্কৃতি আছে। সব সংস্কৃতিই পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়। কাজেই লোকসংস্কৃতিরও পরিবর্তন হচ্ছে। তবে লোকসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যে নিজেদের পেশায় থাকতে পারছেন না, সেদিকটায় নজর দিতে হবে। এই দায়িত্ব সরকার ও বুদ্ধিজীবীদের।