চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত মার্কেট চত্বরে মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের ছয়টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান চলছিল। পাশেই রিকশা থামিয়ে অনুষ্ঠান দেখছিলেন অনেক রিকশাচালক। তাঁদের একজন মো. নয়ন সরকার। তিনি বলেন, গরম অনেক। তাই একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। এই ফাঁকে গান–নাচও দেখা হলো।
কী উপলক্ষে অনুষ্ঠান, সেটিও নয়ন সরকারের জানা আছে। মে দিবসে সরকারি ছুটি। কিন্তু তিনি রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। রোদ, ঝড়বৃষ্টিতে তাঁর রিকশার প্যাডেল থেমে থাকে না। আজও ব্যতিক্রম নয়। কারণ, জীবনের চাকা তো আর থেমে নেই।
নয়ন সরকার বলেন, রিকশা না চালালে খাবার আসবে কোথা থেকে। বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। সেখানে পাঁচজনের খোরাক দিতে হয়। তাই তাঁর কোনো ছুটি নেই।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় নয়নের বাড়ি। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম আসেন পেটের দায়ে। থাকেন নগরের আমবাগান এলাকায়। নিজেকে ৩৫ বছর বয়সী দাবি করে তিনি বলেন, ১৮ বছর ধরে চট্টগ্রামে রিকশা চালাচ্ছেন। বাড়িতে মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। সন্তানদের মধ্যে দুই ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে।
নয়ন বলেন, এখন আগের মতো আয়–রোজগার নেই। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে আসছে। তাঁর তো প্যাডেল রিকশা। তাই আগের মতো যাত্রীও পান না। চলতে খুব কষ্ট হয়।
শাহ আমানত মার্কেট চত্বরে দাঁড়িয়ে খরচের একটি ফিরিস্তি দিলেন এই রিকশাচালক। তিনি জানান, রিকশাটি ভাড়ায় নেওয়া। দিনে ১২০ টাকা দিতে হয় মালিককে। চট্টগ্রাম শহরে বাসা ভাড়ার জন্য গুনতে হয় তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া খাবার খরচ রয়েছে। বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। তাই ইদানীং খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।
একদিকে সীমিত আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা, অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সব মিলিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়তে গিয়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছেন নয়ন। তিনি বলেন, আগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল। ভাড়াও বেশি পেতেন। এখন চাল, ডাল ও তেলসহ সব পণে৵র দাম বেড়েছে। কিন্তু তাঁর আয় বাড়েনি। তা ছাড়া গরমে রিকশা টানতে খুব কষ্ট হয়। নিজের থাকা খাওয়ার খরচ মিটিয়ে বাড়িতে পাঁচ–ছয় হাজার টাকা পাঠাতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়।
ঈদুল ফিতরে বাড়ি গিয়েছিলেন এই রিকশাচালক। পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন থেকে আবার চট্টগ্রামের কর্মস্থলে ফিরে আসেন। সকাল–বিকেল দুই বেলা রিকশা নিয়ে বের হন তিনি। শ্রমিকের আট ঘণ্টার শ্রমঘণ্টা, বিশ্রাম, বিনোদন এসব তাঁর জীবনে উপেক্ষিত।
নয়ন বলেন, ১৮ বছর ধরে একই কাজ করছেন। কোনো উন্নতি নেই। পড়ালেখা করেননি। তাই কোথাও চাকরিও করতে পারেন না। রিকশাই তাঁর সম্বল। টেনেটুনে চলছেন কোনোভাবে। বিনোদন বলতে কাজের ফাঁকে রাস্তাঘাটের পাশে অনুষ্ঠান, খেলাধুলা একটু–আধটু দেখা, এতটুকুই।