উড়ালসড়কের একাংশের উদ্বোধন ২ সেপ্টেম্বর। মেট্রোরেল মতিঝিল যাবে ২০ অক্টোবর। টানেল চালু ২৮ অক্টোবর।
দুই মাসের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ খাতের একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন এবং পদ্মা সেতুর রেলসংযোগের মতো সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্প রয়েছে। তেমনি আছে ঢাকার যানজট নিরসনে নেওয়া উড়ালসড়ক (একাংশ) এবং দেশে নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল প্রকল্পও।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ঢাকায় দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ চালু করা হবে আগামী ২ সেপ্টেম্বর। মেট্রোরেলের লাইন-৫ (নর্দার্ন রুট)-এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর।
বর্তমানে মেট্রোরেলের লাইন-৬-এ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। আগামী ২০ অক্টোবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ চালু করা হবে।
২২ অক্টোবর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে ১৪০টি সেতু, ১২টি ওভারপাস ও যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (ভিআইসি) উদ্বোধন করা হবে। আর ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
রেল কর্তৃপক্ষ আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে চারটি প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। যদিও কোনোটিরই দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। প্রকল্পগুলো হলো ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন চালু, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন উদ্বোধন ও খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু।
সব কটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলে কথা রয়েছে। এসব কর্মসূচির দিন ঢাকা, সাভার ও চট্টগ্রামে সুধী সমাবেশে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে চারটি প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। যদিও কোনোটিরই দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। প্রকল্পগুলো হলো ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন চালু, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন উদ্বোধন ও খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যাবেন বলে কথা রয়েছে। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত আন্তদেশীয় রেললাইন উদ্বোধনের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, সব কটি প্রকল্প চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে রেললাইন চালু হতে পারে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালুর জন্য অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সময় চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর চালু করা হয়। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই রেল। ওই দিন উদ্বোধন শেষে বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাওলা থেকে রেললাইন ধরে যাত্রাবাড়ীর কাজলা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার উড়ালসড়ক নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে সরকারের সেতু বিভাগ। ২ সেপ্টেম্বর উড়ালসড়কের কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেলা তিনটায় আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তৃতা করবেন তিনি।
তবে উড়ালসড়ক দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে পারবে পরদিন থেকে। এই উড়ালসড়ক পাড়ি দিতে যানবাহনের মালিকদের টোল দিতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে যানবাহনের শ্রেণিভেদে ৮০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত টোল হার নির্ধারণ করেছে।
ঢাকা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ২০১১ সালের জুন মাসে উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি ২০১৬ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নকশা বদল, ভূমি অধিগ্রহণ, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা পাঁচবার পিছিয়েছে।
তাড়াহুড়া নয়, কাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্পগুলো চালু হচ্ছে।সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর চালু করা হয়। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই রেল। ওই দিন উদ্বোধন শেষে বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনায় রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে আগারগাঁওয়ের পর ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিলে মেট্রোরেল থামবে। পর্যায়ক্রমে তালতলা, বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে মেট্রোরেল থামানো হবে। প্রথম দিকে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালানো হতে পারে।
মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে অবশ্য মেট্রোরেল ছিল মতিঝিল পর্যন্ত। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়। কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে ২০২৫ সাল লেগে যেতে পারে।
একটি দিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারার দিকে যাওয়া যায়। অন্যটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা হয়ে শহরে আসা যাবে। মাঝপথে সুড়ঙ্গ দুটির একটি সংযোগ পথ রয়েছে।
সড়ক মন্ত্রণালয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর, গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি এমআরটি লাইন-৫ (নর্দার্ন রুট) হিসেবে পরিচিত। ওই দিন সাভারে সুধী সমাবেশে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সেতুমন্ত্রী জানান, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত মোট ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল হবে, যার মধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল এবং সাড়ে ৬ কিলোমিটার উড়ালপথে হবে।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুটের নির্মাণকাজ ১০টি ভাগে (প্যাকেজ) সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে গত মে মাসে। হেমায়েতপুরে এই কাজেরই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে জাইকা ঋণসহায়তা দিচ্ছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। এই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গ রয়েছে। একটি দিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারার দিকে যাওয়া যায়। অন্যটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা হয়ে শহরে আসা যাবে। মাঝপথে সুড়ঙ্গ দুটির একটি সংযোগ পথ রয়েছে।
এই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হলে টোল দিতে হবে। যানবাহনের শ্রেণিভেদে টোল ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
টানেল নির্মাণের প্রকল্প ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায়। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে তা বেড়ে হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) পদ্ধতিতে চীন সরকারের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ঠিকাদারও চীনের চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। শুরুতে প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। পরে দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাড়াহুড়া নয়, কাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্পগুলো চালু হচ্ছে।