আশিয়ান সিটি প্রকল্প

বৈধতা প্রশ্নে আপিলের শুনানি শেষ, রায় ২২ নভেম্বর

হাইকোর্ট ভবন
 ফাইল ছবি

রাজধানীর উত্তরা ও বিমানবন্দর-সংলগ্ন আশিয়ান ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের আশিয়ান সিটি প্রকল্পের (দক্ষিণখান মৌজা) বৈধতা–সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর রায়ের জন্য ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ রায়ের এই দিন ধার্য করেন।

এর আগে আপিলের ওপর গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ২ নভেম্বর শুনানিতে আপিল বিভাগ রাজধানীর বেসরকারি আবাসন প্রকল্পগুলো অনুমোদন প্রক্রিয়া ও অবস্থা সম্পর্কিত তথ্যদি রাষ্ট্রপক্ষকে ৭ নভেম্বর (আজ) জানাতে বলেন। আজ এ–সংক্রান্ত তথ্য–সংবলিত তালিকা আদালতে তুলে ধরেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

ওই তালিকায় দেখা যায়, বেসরকারি ১৬টি বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের রাজউকের অনুমোদন ও জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র–সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি বেসরকারি আবাসিক প্রকল্প না হওয়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদিত বলে উল্লেখ রয়েছে। আর ছয়টির ক্ষেত্রে ২০০৪ সালের বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদিত নয় বলে এ সম্পর্কিত তথ্য রাজউকের কাছে সংরক্ষিত নেই বলে উল্লেখ রয়েছে। দুটি হাউজিং সোসাইটির ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের কাজ চলমান আছে বলা হয়েছে। একটি বিল্ডার্সের ক্ষেত্রে রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত নয় বলে এ সম্পর্কিত তথ্য রাজউকের কাছে সংরক্ষিত নেই বলে উল্লেখ রয়েছে। আরেকটি আবাসন প্রকল্পের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজউকে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে, অনুমোদন–সংশ্লিষ্ট ঘাটতি কাগজপত্র দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অপর একটির বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজউক কর্তৃক জমি অধিগ্রহণ করে আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

আদালতে বেলাসহ আপিলকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও প্রবীর নিয়োগী শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। আশিয়ান সিটির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও আহসানুল করিম। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. হোসনে মোবারক ও রেদওয়ান আহমেদ রানজিব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া ২০০৬ সালে উত্তরার দক্ষিণখান এলাকায় আশিয়ান সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে দাবি করে—এ নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) আটটি সংগঠন ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট করে। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রিভিউ মঞ্জুর করে প্রকল্প অবৈধ ঘোষণার রায় বাতিল করেন। এই রায়ের রিট আবেদনকারী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। আপিল বিভাগ ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টের দেওয়া রিভিউর রায় স্থগিত করেন। এ ছাড়া আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আশিয়ান সিটি প্রকল্পের সব ধরনের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে পৃথক আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ। এই আপিলের ওপর আজ শুনানি শেষ হলো।