মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ) মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ) মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে

মন্ত্রীর বাসার লিফটে ‘মারধর’

ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি, ইন্ধনদাতা হিসেবে এল আরেকজনের নাম

সহকর্মীকে মারধর করে রক্তাক্ত করার অভিযোগ ওঠা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে চিঠি দিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। পাশাপাশি এ ঘটনায় ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে অধিদপ্তরের এক পরিচালক বরুন কুমার দত্তের নাম এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরকে এই চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠি দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। গতকাল শুক্রবার এই চিঠি সই হলেও তা আজ শনিবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা হলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মলয় কুমার শূর। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন চিঠি জারি করল অধিদপ্তর।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পরীবাগ এলাকার দিগন্ত টাওয়ারে মন্ত্রীর বাসার লিফটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী।

এই পরিস্থিতিতে আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিল অধিদপ্তর। সেই চিঠিতে বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রীর বাসার লিফট থেকে নামার পর আজিজুলের ভয়াবহ হামলার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম হয়েছেন মলয় কুমার শূর। তাঁর চোখ, কপাল, মাথা, নাকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে আঘাত করা হয়েছে। মলয় কুমার শূর অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেও হামলার উদ্দেশ্য ও ধরন ভয়াবহ।

আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, সিরাজগঞ্জ ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দুর্নীতির অভিযোগ এবং দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে বর্তমানে দুটি বিভাগীয় মামলা চলমান থাকার বিষয়ও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আজিজুল ইসলাম বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছেন বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে। এই কর্মকর্তা সরকার, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করছেন বলেও তাতে উল্লেখ রয়েছে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে আজিজুল ইসলামকে আজও ফোন করা হয়, তবে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ইন্ধনের অভিযোগ

মারধরের এ ঘটনায় ওই চিঠিতে আজিজুল ইসলামের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (হিসাব, বাজেট ও নিরীক্ষা শাখা) বরুন কুমার দত্তের বিরুদ্ধেও ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনার ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে বরুন কুমার দত্তের নাম এসেছে।

আজিজুল ও বরুনের নাম উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ডকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল বিধায় ভুক্তভোগী কর্মকর্তা মলয় কুমার শূরের আবেদন সুবিবেচনায় নেওয়া একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

বরুন কুমার দত্ত আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এমন চিঠি সম্পর্কে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘ইন্ধনদাতা, এটা আবার কেমন কথা। সবাই তো জ্ঞানী লোক, সচেতন লোক।’ শিক্ষিত মানুষকে কেউ ইন্ধন দিতে পারে, এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।

দুই সংগঠনের নিন্দা

মলয় কুমার শূরের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (বিভিএ)। সংগঠন দুটি আজিজুল ইসলামের শাস্তি দাবি করেছে।

অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বারবার গুরুতর অপরাধ করে লঘুদণ্ড তথা মাফ পেয়ে যাওয়ায় আজিজুলকে এ রকম বেপরোয়া হতে উৎসাহিত করেছে।