রাজধানী গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন  মালপত্র  নিয়ে যাচ্ছে একদল লোক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে
রাজধানী গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন  মালপত্র  নিয়ে যাচ্ছে একদল লোক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে

আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে কেউ নিচ্ছে টেবিল, কেউ কমোড, কেউ টাইলস

রাজধানী গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন  মালপত্র  নিয়ে যাচ্ছে একদল লোক। এর আগে কার্যালয়ে আগুন লাগানো হয়।

এভাবে  মালপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য নানা কারণের কথা বলছেন লোকেরা। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের লোকদের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারেননি। কেউ বলছেন, অন্য দল করায় একাধিক মামলা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কেউ বলছেন, অন্যদের দেখে তিনিও একই কাজ করছেন।

কার্যালয়ের ভেতর থেকে যে যা পারছেন নিয়ে যাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে

আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। কার্যালয়ের প্রতিটি তলা থেকে মালপত্র খুলে নেওয়ার দৃশ্য শত শত মানুষ মোবাইলে ধারণ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার  পর বিকেলে গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন লাগানো হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় আজ দুপুরের দিকে সাড়ে ১২টার দিকে আবার আগুন দেওয়া হয়। এরপরই কার্যালয়ের সব মালপত্র নিয়ে যেতে শুরু করেন একদল মানুষ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ৮ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। পুরোনো ভবন ভেঙে সেখানে ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন  এই ভবন ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে  যেসব তলায় আগুন নিভে এসেছে সেসবের ভেতরে থাকা সব আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।  কেউ কার্যালয়ের ভেতর থেকে রড নিয়ে বের হচ্ছে, কেউ বাথরুমের কমোড খুলে মাথায় নিয়ে বের হচ্ছে। কেউ চেয়ার নিয়ে, কেউ টেবিল নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ইলেকট্রনিক সামগ্রী খুলে নিয়ে যাচ্ছে।

মালপত্র নিয়ে যাওয়ার ছবি তোলেন অনেকে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে

ঢাকার একটি এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নিচতলা থেকে টাইলস বের করে স্তূপ করছিলেন। শাহবাগে আজ কিছু হচ্ছে কি না তা দেখতে এসেছেন বলে জানালেন হাবিবুর। বললেন, তিনি বাবুর্চির কাজ করেন।  তিনি বলেন, গুলিস্তান এলাকায়ও তাঁর কাজ ছিল। এসে দেখেন সবাই মালপত্র নিয়ে যাচ্ছে।  তাই  ভেতরে ঢুকেছেন।  রিকশাচালক, পথচারী এমনকি ভবঘুরে লোকজনকেও কার্যালয় থেকে নানা জিনিস নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নওগাঁ সদর এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বললেন, বিএনপি করার অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে তিনি এলাকায় যেতে পারেন না। গাজীপুরে একটি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন। মামলার কারণে তাঁর মাও ঘরে ঘুমাতে পারেন না। দীর্ঘদিনের জমানো ক্ষোভ থেকে আওয়ামী লীগের  কার্যালয়ে ঢুকে তিনি প্লাস্টিকের ছোট কয়েকটি সামগ্রী নিয়েছেন। এলাকায় গিয়ে দেখাবেন আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে এটি নিয়ে এসেছেন।

অনেকে কার্যালয়ের ভেতর থেকে রড নিয়ে যাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে

আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মালপত্র নিয়ে যাওয়ার ছবি কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন। তাঁরা বলছেন, লুটপাটের টাকায় বানানো কার্যালয়ের মালপত্র সাধারণ জনতা নিয়ে যাচ্ছে।

কার্যালয়ের সামনে মুঠোফোনে মালপত্র নিয়ে যাওয়ার ছবি তুলছেন ঢাকার একটি এলাকার বাসিন্দা আসগর আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের লোকদের অত্যাচারে এলাকাতেও শান্তিতে থাকতে পারেননি।

কার্যালয়টির সামনে দলটির কোনো নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি না থাকলেও বিএনপির লোকজন সেখানে কিছুক্ষণ পরপর মিছিল নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। গুলিস্তান এলাকার বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীরা  এই মিছিলে শামিল হয়েছেন।