হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি

১৩ বিদেশি দূতকে একসঙ্গে তলব

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক (বা থেকে)
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলায় নিন্দা জানিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ১২টি বিদেশি মিশন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। বিবৃতিতে তারা ওই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের জবাবদিহির দাবি জানিয়েছিল। ওই বিবৃতির জেরে ১৩টি বিদেশি মিশনের প্রধানদের আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দেশি ও বিদেশি কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এসব কূটনীতিকের কাছে ওই বিবৃতির বিষয়ে সরকারের অসন্তোষের কথা তুলে ধরবেন।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি ১২টি মিশন ও ইইউ ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে মিশনগুলোর প্রধানদের আগামীকাল (আজ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানে ওই বিবৃতির বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।’

অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, বিদেশি মিশনগুলোর যৌথ বিবৃতির বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ‘তলব’ করার বিষয়টি তাঁদের কাছে পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে উল্লেখ করা হয়নি। গতকাল ওই মিশনগুলোতে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, যুক্তরাজ্য হাইকমিশন ও ইইউ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকেরা আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসও ১৮ জুলাই টুইট করেছিলেন। এর জেরে দুই দিন পর ২০ জুলাই জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গোয়েন লুইস বাংলাদেশে না থাকায় জাতিসংঘের শিশু তহবিলের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন।

এ বিষয়ে ২১ জুলাই নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছিলেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের যে দলটি কর্মরত, তাদের ওপর মহাসচিবের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এ ছাড়া সদস্যদেশের সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলব করাটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। সমন্বয়কারীর বলা কোনো কথার সঙ্গে সে দেশের দ্বিমত থাকলে তলব করতেই পারে।

জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারীকে তলবের পাঁচ দিন পর এবার সরকার একসঙ্গে ১৩ বিদেশি মিশনের প্রধানদের একই বিষয়ে তলব করল।

সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে ইইউ এবং ১২টি বিদেশি মিশনের প্রধানদের আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
মো. শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

সাবেক একাধিক পররাষ্ট্রসচিব গতকাল এই প্রতিবেদককে জানান, কোনো বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে একসঙ্গে এতজন রাষ্ট্রদূতকে তলবের ঘটনা নজিরবিহীন। তবে অতীতে একসঙ্গে এর চেয়ে বেশিসংখ্যক কূটনীতিককে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি জানানো, কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশ অংশ নিলে প্রার্থিতার সমর্থনে ভোটের জন্য ডাকার নজির আছে।

সাবেক একাধিক কূটনীতিক মনে করেন, একসঙ্গে ১৩ কূটনীতিককে ডেকে অসন্তোষ না জানালেও চলত। কারণ, এতে সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরির আশঙ্কা থাকে। অতীতে কোনো বিষয়ে চরম অসন্তোষ থাকলেও সরকার এভাবে একসঙ্গে কূটনীতিকদের না ডেকে তাঁদের আলাদাভাবে জানিয়েছে।

১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও ইইউ আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহির দাবি জানাই। আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে ওই বিবৃতি প্রচার করেছিল।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষের দিক থেকেই যা হয়েছে, তা অতীতে হয়নি। ১৩টি বিদেশি মিশনের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়ে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে তলবের বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও এটি যে তলব, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, সরকার অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের ডেকেছে। আবার একটি বিষয়ে ১৩টি মিশনের এভাবে বিবৃতি প্রচারটাও স্বাভাবিক নয়। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টিকে পাশ্চাত্যের দেশগুলো যে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, তা যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে তারা জানিয়েছে। কারণ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের যে সংশয় আছে, সেটার একটা আভাস বিবৃতিতে প্রকাশ পেয়েছে।