বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। আজ বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতির শুরুতে গত ২৮ অক্টোবরের পরিস্থিতি উল্লেখ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক বিক্ষোভের ওপর পুলিশ অহেতুক শক্তি প্রয়োগ করেছে। সব পক্ষ সহিংসতায় অংশ নিলেও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপরই ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর এবং তার পরবর্তী সহিংসতায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ (প্রকৃতপক্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহতের খবর গণমাধ্যমে এসেছে) কমপক্ষে ১১ জন নিহত এবং কয়েক শ জন আহত হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘নির্বাচনে বিরোধীদের অংশগ্রহণ ও ভোট দেওয়ার অধিকার বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সরকার ধরপাকড় চালানোর কারণে অনেক বাংলাদেশি বলছেন, তাঁরা সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন।’
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে, তাঁদের হয়রানি করে এবং কারাবন্দী করে নির্বাচন আয়োজন করা হলে, তা যে সুষ্ঠু হবে না, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের জোর দিতে হবে।
এইচআরডব্লিউ মনে করে, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের হাজারো সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এবং দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছর সরকার ক্রমাগত নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার চালিয়ে গেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের ঘটনাকে বিরোধীদের দমন করার একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুপক্ষই সহিংসতায় জড়িত ছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দুদলই সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। সহিংসতার জন্য কর্তৃপক্ষ বিএনপিকে দায়ী করেছে। বিএনপির অভিযোগ, সহিংসতা উসকে দিতে সরকারি পক্ষ সমাবেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে তারা বলেছে, এ সমাবেশ নস্যাৎ করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত শান্তিপূর্ণ প্রচারণায় অংশ নিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানানো।
বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের আহ্বানের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় বলেছে, এ ধরনের সহিংসতা যে অগ্রহণযোগ্য, তা সব রাজনৈতিক কর্মীকে স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে। তাঁদের বলতে হবে, সহিংসতায় উসকানি দেয়—এমন কোনো কর্মকাণ্ড বা বিবৃতি থেকে তাঁদের বিরত থাকতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেসব প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে, তাঁরা বলেছেন, পুলিশ ভিড়ের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের উচিত সহিংস বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন জাতিসংঘের ‘বেসিক প্রিন্সিপালস অন দ্য ইউজ অব ফোর্স অ্যান্ড ফায়ারআর্মস বাই ল এনফোর্সমেন্ট অফিশিয়ালস’ নীতিমালা মেনে চলে, সেই নির্দেশ দেওয়া।
এইচআরডব্লিউর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগে বিরোধী দলের কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেছেন, কর্তৃপক্ষ বিরোধী দলের সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের আগে ঢাকাজুড়ে চেকপয়েন্টও বসিয়েছিল পুলিশ। অন্য জায়গা থেকে সমাবেশে অংশ নিতে আসার সময় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিরোধী দলের ভাষ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে একই ধরনের বিক্ষোভ হওয়ার পর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইট ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়, আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন ও অন্যান্য হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর যে অভিযোগ আছে, সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক দশক আগে পাস হওয়া নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মীনা গাঙ্গুলি বলেন, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পরিষ্কার বলে দিতে হবে, নির্বাচনী হয়রানি চলতে থাকলে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম আর চালাবে না। তাদের উচিত গণগ্রেপ্তার এবং বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো। বাংলাদেশ যদি নির্যাতন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব কী পড়বে, তারও একটি রূপরেখা তৈরি করা প্রয়োজন।