বড় শিল্পকারখানায় নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন অনেকে। ছোট আকারের এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘ক্যাপটিভ’ নামে পরিচিত। এসব কেন্দ্রে গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি দক্ষ জেনারেটর ব্যবহারের সুযোগ আছে। এটি করা গেলে বছরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির খরচ কমতে পারে ৪৬ কোটি ডলার।
শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে গবেষণা করে এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএ)।
সোমবার রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। এতে বলা হয়, ৫১টি শিল্পকারখানার প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ১২৪টি গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে।
আইইএফএর গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের গড় দক্ষতা ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। উচ্চ দক্ষতার জেনারেটর ব্যবহার করে এটি ৪৫ দশমিক ২ শতাংশের উন্নীত করা সম্ভব। দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জেনারেটর থেকে নির্গত তাপ উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বছরে এলএনজি আমদানি কমতে পারে ৫০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ঘনফুট। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমদানি বাড়ানোর চেয়ে জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোয় জোর দিতে হবে।
বিশ্ববাজারে দাম কম থাকায় ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীলতা ও ডলার–সংকটে নাজুক আর্থিক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা আগে থেকে কোনো ধারণায় ছিল না। এতে এলএনজি আমদানি নিয়ে আরও চাপে পড়ে দেশের অর্থনীতি। ২০২০ সালের শুরু থেকে করোনাভাইরাস মহামারি ও ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব জ্বালানি বাজার অস্থির হয়ে এলএনজির দাম প্রায় নাগালের বাইরে চলে যায়।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক আইইইএফএর প্রধান বিশ্লেষক এবং গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক শফিকুল আলম বলেন, সাশ্রয়ী জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি অর্থনীতির জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, সেই অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যে হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা মাত্রাতিরিক্ত বাড়লে দেশের অর্থনীতি আরও ঝুঁকিতে পড়বে।
গবেষণার তথ্য বলছে, বিভিন্ন খাতে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকায় এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। গ্রিড থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ–সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক শিল্পকারখানা নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। তাদের বর্তমান জেনারেটর পরিবর্তন করে দক্ষ জেনারেটর বসাতে যে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, তা দেড় বছর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তুলে আনা সম্ভব। আর জেনারেটরের তাপ উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করতে পারলে বিনিয়োগ মাত্র এক বছরেই তুলে আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি করলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যেতে পারে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা।
বাংলাদেশ পর্যাপ্ত জ্বালানি উৎপাদন করে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণে ধীরগতি এবং নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ আহরণে বিনিয়োগের অভাব বাংলাদেশকে বিশেষ সংকটের মুখোমুখি করেছে। এ জন্য গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে আইইএফএ। সুপারিশে বলা হয়, বিদ্যুতের গ্রিড আধুনিকায়ন করে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করে শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসায় উৎসাহী করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। পরবর্তী বৈশ্বিক ধাক্কা সামলাতে এলএনজি আমদানিনির্ভরতা কমাতে এখনই পরিকল্পনা ও তৎপরতা শুরু করতে হবে।