বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বারবার সময় পেয়েও ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আইনানুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাবে, তাদের ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। বছর শেষে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে তিন থেকে ছয় মাস সময় দিয়েছে ইউজিসি। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। আর দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোথাও (অস্থায়ী ক্যাম্পাস) শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। ইউজিসি দিন কয়েক আগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউজিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আইনানুযায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি—দেশের এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। তা না হলে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্যান্য ক্যাম্পাস বা ভবনগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব সিদ্ধান্ত তখন সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে দেশে ১০৮টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আইনানুযায়ী, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। এ জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক একর, অন্য এলাকার ক্ষেত্রে দুই একর জমি থাকতে হবে।
২০১০ সালে সংশোধিত আইন হওয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কয়েক দফা সময় দেওয়ার পরও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। তবে পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। চাপের কারণে অনেকেই নিজস্ব ক্যাম্পাস করেছে বা করছে।
ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, বারবার সময় দেওয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায়, প্রয়োজনীয় চেষ্টা না করায় দেশের চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, চলতি জানুয়ারি থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
এ ছাড়া মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিষয়ে ইউজিসির সিদ্ধান্ত হলো, এগুলো স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া আর কোথাও শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না।
সম্প্রতি মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৭ সাল থেকে আশুলিয়ায় নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করেছে। তবে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত নিজস্ব ভবনে সীমিত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য নতুন করে তিন মাস সময় পেয়েছে ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবরে নিজস্ব ক্যাম্পাস করেছে। তবে, ইকবাল রোডে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেও সীমিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি এবং দ্য পিপল’স ইউনিভার্সিটি ছয় মাস সময় পেয়েছে। ইউজিসির অবস্থান হলো, এই সময়ের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য ক্যাম্পাস বা ভবনগুলো অবৈধ হবে, সেগুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে।