সাড়ে চার বছর পরে পরিবারের কাছে ফিরলেন ঝালকাঠির মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী রাবেয়া বেগম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বেসরকারি সংস্থা মারোত
সাড়ে চার বছর পরে পরিবারের কাছে ফিরলেন ঝালকাঠির মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী রাবেয়া বেগম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বেসরকারি সংস্থা মারোত

স্বামীর পর নিখোঁজ হয়েছিলেন স্ত্রী, চার বছর পর খোঁজ মিলল তাঁর

মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী আবদুল মালেক নিখোঁজ হন প্রায় ১৫ বছর আগে। এরপর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন স্ত্রী রাবেয়া খাতুন। একপর্যায়ে রাবেয়াও নিখোঁজ হয়ে যান। সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েও দুজনের সন্ধান পাননি। অবশেষে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় চার বছরের বেশি সময় পর রাবেয়া খাতুনের সন্ধান পেয়েছে তাঁর পরিবার। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে চারটার দিকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে রাবেয়া খাতুনকে।

রাবেয়া খাতুনের শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার সূর্যপাশা গ্রামে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোত)।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মালেক ও রাবেয়া খাতুন দম্পতির তিন ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। আবদুল মালেক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর রাবেয়া খাতুন পরিবারের দেখভাল করে আসছিলেন। ২০১৯ সালের দিকে সেও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘোরাঘুরির সময় নিখোঁজ হয়ে যান রাবেয়া খাতুন। পরিবারের সদস্যরা এরপর তাঁর আর খোঁজ পাননি। তাঁর তিন ছেলে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারোত সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধারে, দোকানের আশপাশে, অলিগলিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে রাবেয়া খাতুনকে। কিছুদিন আগে তাঁকে অসুস্থ হয়ে একটি দোকানের সামনে পড়ে থাকতে দেখে সেবা দেন পল্লি চিকিৎসক রূপণ কুমার শর্মা। এরপর কয়েক দফায় তাঁর সঙ্গে দেখা করে কৌশলে পরিবারের তথ্য জানার চেষ্টা করেন রূপণ। একপর্যায়ে রাবেয়া আক্তার তাঁর বাড়ি ঝালকাঠির সূর্যপাশায় বলে জানান। এরপর রূপণ নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেন। পরে ওসির সহযোগিতায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে রাবেয়া বেগমের বড় ভাই আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তিনি রাবেয়ার পরিচয় নিশ্চিত করে, তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাজমপাড়া এলাকায় পরিবারের সদস্যরা এসে রাবেয়াকে নিয়ে যান।

জানতে চাইলে রাবেয়া খাতুনের বড় ভাই আবুল বাশার বলেন, তাঁর বোনকে আবার ফিরে পাবেন সেই আশা তাঁরা ছেড়ে দিয়েছিলেন। রাবেয়া খাতুনের জন্য মারোতের সদস্যরা যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তা আজীবন মনে থাকবে। বোনের স্বামীকেও ফিরি পাবেন, এখন সেই আশা দেখছেন তিনি।

মারোতের সভাপতি সন্তোষ কুমার শীল প্রথম আলোকে বলেন, রাবেয়া খাতুনকে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে মারোতের সদস্যরা খুশি। এর আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও ৪৮ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মারোতের যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি। উপজেলায় ওষুধ বিপণনে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী, চিকিৎসক, শিক্ষক ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০ জন সদস্যের আর্থিক অনুদানে সংগঠনটি পরিচালিত হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনার সময়ে একটানা ২৬৭ দিন উপজেলায় ভবঘুরে অবস্থায় থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের খাবার দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রতি সপ্তাহে একবার করে খাবার দেওয়া হয়। এ ছাড়া অসহায় মানুষকে চিকিৎসাসেবা, শীতবস্ত্র বিতরণ, মৃত ব্যক্তির সৎকার ও দাফনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মারোতের সদস্যরা পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানসিক রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়ার যে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন, তা খুবই প্রশংসনীয়। সংগঠনের সদস্যদের এসব মানবিক কাজ দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবেন।