রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ করে। আজ শনিবার ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে দলটি
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ করে। আজ শনিবার ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে দলটি

ইউনিয়নে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগও নামছে আজ

আজ শনিবার ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করবে বিএনপি। একই দিনে ইউনিয়নে ইউনিয়নে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির পদযাত্রার পাল্টা হিসেবে আজ শনিবার দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ‘শান্তি সমাবেশের’ কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এত দিন রাজধানী ঢাকায় একই দিনে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছিল। এবার সেটি তৃণমূলেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ইউনিয়ন পর্যায়ের এ কর্মসূচিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাগ করে ৪০টি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আজ তাঁদের নির্ধারিত জেলায় অন্তত একটি ইউনিয়নে দলীয় সমাবেশে অংশ নেবেন।

গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বছরব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির’ বিরুদ্ধে সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণার পরই পাল্টা হিসেবে শান্তি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এমনকি অনানুষ্ঠানিকভাবে ৪০টি জেলায় কেন্দ্রীয় কমিটির কোন কোন নেতা থাকবেন, এর একটা তালিকা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৬টি। এর মধ্যে ৪০টিতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন না, সেখানে জেলার নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি খুলনায় শান্তি সমাবেশে অংশ নেবেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, অসুস্থ কিংবা দেশের বাইরে না থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সবাইকে নির্ধারিত জেলায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তাঁরা নির্ধারিত জেলার একটি ইউনিয়নের শান্তি সমাবেশে অংশ নেবেন। বাকি ইউনিয়নের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে করণীয় ঠিক করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে ইউনিয়নের কোনো একটি স্থানে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। সমাবেশের স্থান ঠিক করার দায়িত্ব স্থানীয় আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে কোথাও কোথাও শান্তি সমাবেশের পর মিছিলও হতে পারে।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শুক্র ও শনিবার এমনিতেই কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় যান। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রস্তুতিও হবে। বিএনপিকে চাপে রাখতে কর্মসূচিও পালিত হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে টাঙ্গাইলের কর্মসূচিতে আব্দুর রাজ্জাক ও শামসুন নাহার, গোপালগঞ্জে মুহাম্মদ ফারুক খান, মাদারীপুরে শাজাহান খান ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ফরিদপুরে আবদুর রহমান, রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান (লিটন), গাজীপুরে সিমিন হোসেন (রিমি), চট্টগ্রাম উত্তরে হাছান মাহমুদ ও দক্ষিণে আমিনুল ইসলাম, চাঁদপুরে দীপু মনি ও সেলিম মাহমুদ, রংপুরে সুজিত রায় নন্দী, জয়পুরহাটে আবু সাঈদ আল মাহমুদ, খুলনায় এস এম কামাল হোসেন, জামালপুরে মির্জা আজম, পটুয়াখালীতে আফজাল হোসেন, বান্দরবানে ওয়াসিকা আয়শা খান, লক্ষ্মীপুরে ফরিদুন্নাহার, রাজবাড়ীতে দেলোয়ার হোসেন, মুন্সিগঞ্জে মৃণাল কান্তি দাস এবং নেত্রকোনায় অসীম কুমার উকিলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পাল্টা হিসেবে গত বছরের নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগও একই দিন অন্য জেলা বা ঢাকায় দলের তৃণমূলের একেকটি দলীয় সম্মেলনকে সমাবেশে রূপ দিতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও রাজপথে অবস্থান নেন। এর পর থেকেই মূলত পাল্টাপাল্টি সমাবেশের সূচনা হয়। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে, বিএনপি যত দিন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে, তত দিন আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে।