বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা

বইমেলায় উৎসবের আমেজ

শেখ মুজিব : বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু ড.সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আগামী প্রকাশনী
শেখ মুজিব : বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু
ড.সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
আগামী প্রকাশনী

বইমেলায় এখন বসন্ত। দুই দিন ধরেই ঋতুরাজের আগমনকে স্বাগত জানাতে মেলায় উৎসবের আমেজ। সব শ্রেণির গ্রন্থানুরাগীরাই মেলায় আসছেন। তবে গতকাল দেখা গেল তরুণ-তরুণীরা আসছেন জুটি বেঁধে। পড়ন্ত বিকেলে মেলার মাঠে সঙ্গীর হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানো আর স্টলে স্টলে গিয়ে হরেক রকমের বইয়ের সম্ভার থেকে দু-একটি প্রিয় বই খুঁজে নেওয়ার মধ্য দিয়ে কেটেছে তাঁদের সময়।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ স্মরণ

মেলার অনুষ্ঠানগুলোও এখন বেশ জমে উঠেছে। বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণের মঞ্চে চলছে আলোচনা আর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গতকাল আলোচনার বিষয় ছিল ‘স্মরণ: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’। এতে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। প্রবন্ধ পড়েন আহমদ মোস্তফা কামাল, আলোচক ছিলেন হরিশংকর জলদাস ও ফারজানা সিদ্দিকা।

আলোচকেরা বলেছেন, সাহিত্যের ভেতর দিয়ে জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরার নিপুণ কারিগর ছিলেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। গত শতকের চল্লিশের দশকে পূর্ব বাংলার সাহিত্যে এক আলাদা কণ্ঠস্বর সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তাঁর রচনা বহুমাত্রিক। লোকজীবনের ভাষাকেই তিনি সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সাদামাটা গল্প বলার ভেতর দিয়ে তিনি পাঠকদের এক গভীর বোধ ও উচ্চতর দার্শনিক ভাবনায় পৌঁছে দিয়েছেন।

আজ বুধবার এখানে আলোচনা হবে ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হককে নিয়ে।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টিএসসির প্রান্তে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে লেখকেরা রোজ বিকেলে পাঠকের সামনে বসে তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন। উত্তর প্রান্তের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চটির অবস্থা প্রথম দিকে প্রায় নির্বাসিত পর্যায়ের ছিল। ইদানীং সেখানেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে যাচ্ছেন লেখকেরা। কিছু জনসমাগম হচ্ছে সেখানেও।

ফেরারি আকাশ রেজাউর রহমান প্রথমা প্রকাশন

নির্দেশিকা নেই

এবার শুরু থেকেই মেলার ব্যবস্থাপনা বেশ ঢিলেঢালা গোছের। তা নিয়ে লেখক, প্রকাশক ও গ্রন্থানুরাগীরা অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন। গতকাল স্টলের অবস্থানের পথনির্দেশিকা না থাকায় অসুবিধায় পড়েছিলেন কলকাতা থেকে আসা প্রবীণ দম্পতি অশোক সেনগুপ্ত ও রীতা সেনগুপ্ত। স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশনের স্টলে দেখা হলো তাঁদের সঙ্গে।

অশোক সেনগুপ্ত পেশায় প্রকৌশলী, ডানকান ব্রাদার্সে কাজ করতেন। তবে তিনি খ্যাত নজরুলবিশেষজ্ঞ হিসেবে। বাংলাদেশে এসেছেন জাতীয় কবির নাতনি খিলখিল কাজীর আমন্ত্রণে নজরুল ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে। এ ছাড়া নরসিংদীতেও একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা বললেন, ঢাকার অমর একুশে বইমেলা তাঁদের খুবই ভালো লেগেছে। তবে মেলায় স্টলগুলোর পথনির্দেশিকা না থাকায় তাঁদের একটু অসুবিধা হয়েছে।

বাংলা কথাসাহিত্যে ভিন্ন মাত্রা শান্তনু কায়সার ঐতহ্য

শিশুতোষ বইতেই ভুল বেশি

মেলার শুদ্ধ বানান, শুদ্ধ বাক্য, সুসম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা—যত বই প্রকাশিত হয়, তার পাঁচ থেকে সাত ভাগের বেশি হবে না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শিশুতোষ বইয়ের। খুবই দায়সারাভাবে এসব বই ছাপা হয়। একই বই একটু এদিক-ওদিক করে, প্রচ্ছদ বদলে, লেখকের নাম বদলে অনেক প্রকাশক প্রকাশ করেন। এতে মূল বইটি কার, তা বোঝাই যায় না। মেলার বই নিয়ে এই বয়ান ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জহিরুল আবেদীনের। তিনি বলেন, ব্যাকরণগত ত্রুটি তো আছেই, এর সঙ্গে ইদানীং ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমের কথিত তারকারা মেলায় আসছেন তাঁদের বই নিয়ে। এমনকি কেচ্ছা–কেলেঙ্কারির কাহিনি লিখে লেখক হওয়ার বাসনায় মেলায় বই নিয়ে আসছেন। এসব হুজুগে বইয়ের জোয়ারে পাঠক বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে অনেক মেধা–শ্রমে ভালো লেখা তৈরি করেন, প্রকাশকেরা বহু অর্থ খরচ করে যেসব লেখা প্রকাশ করেন, তবে সেসব বই পাঠকের হাতে যাচ্ছে না। নিম্নমানের বই কিনে পাঠকেরা প্রতারিত হচ্ছেন।

ইত্যাদি এবার হাসান আজিজুল হকের আট খণ্ড রচনাবলি প্রকাশক করছে। এতে হাসান আজিজুল হকের প্রকাশিত–অপ্রকাশিত সব লেখা রয়েছে। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময় বেশ কিছু লেখকের উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধের বইও তারা প্রকাশ করেছে।

নতুন বই

এখন প্রতিদিনই নতুন বই শতকের ঘর পার করছে। তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১১০টি। প্রথমা প্রকাশনে গতকাল নতুন এসেছে রেজাউর রহমানের উপন্যাস ফেরারি আকাশ। বিক্রিও ভালো হয়েছে স্টলে। ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানালেন, বসন্ত আসছে, হয়তো সে কারণেই গতকাল প্রেমের উপন্যাসের বিক্রি ভালো ছিল। বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস নার্গিস, আনিসুল হকের আমারও একটা প্রেমকাহিনি আছে, প্রবন্ধের বই গোলাম মুরশিদের বাংলা গানের ইতিহাস, আবীর শওকত হায়াতের ক্যারিয়ারবিষয়ক ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট, আবুল বাসারের বিজ্ঞানবিষয়ক মহাজাগতিক প্রথম আলো—এই বইগুলো বিক্রির প্রথম দিকে ছিল।

নির্বাচিত কবিতা সোহরাব পাশা ইত্যাদি

মেলার উল্লেখযোগ্য নতুন বইয়ের মধ্যে ঐতিহ্য এনেছে শান্তনু কায়সারের প্রবন্ধ বাংলা কথাসাহিত্যে ভিন্ন মাত্রা, আফসান চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১৯৭১: আন্তর্জাতিক পরিসর, ইত্যাদি এনেছে কবি সোহরাব পাশার নির্বাচিত কবিতা, কথা প্রকাশ এনেছে ভূঁইয়া ইকবাল সম্পাদিত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের নির্বাচিত রচনা, এডুসেন্ট্রিক প্রকাশন এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ জনগণের মুক্তির প্রশ্ন, নবরাগ এনেছে নির্মলেন্দু গুণের কবিতার বই সেরা তিন, এবং মানুষ এনেছে আব্দুল মতিন খানের প্রবন্ধ ভাবনা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ এনেছে অধ্যাপক শামীমা আক্তারের দর্শনবিষয়ক তুলনামূলক ধর্ম, বাঙ্গালা গবেষণা এনেছে রিচার্ড সিসন ও লিও ই রোজের কাজী জাওয়াদ অনূদিত যুদ্ধ ও বিচ্ছিন্নতা: পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ, আগামী এনেছে আবদুল্লাহ আল আমিনের প্রবন্ধ লালন ফকির: এক নিঃসঙ্গ সাধক, অবসর এনেছে নৃপেন ভৌমিকের চিকিৎসাবিষয়ক ডাক্তারি অভিধান, গ্রন্থ কুটির এনেছে ভাষাবিষয়ক হাসান রাউফুনের ণত্ব ষত্ব বিধান যত্ত, মূর্ধন্য এনেছে অধ্যাপক মাহফুজা খানমের স্মৃতিকথা স্মৃতির আঁকড়ে সোনালি রোদ্দুর, অনুপম এনেছে আইটিবিষয়ক সৌমিত্র চক্রবর্তীর প্রোগ্রামিঙে জীবনপাঠ, স্বপ্ন’৭১ এনেছে জামিলুর রুহিতের উপন্যাস কমলা রঙের রোদ, যুক্ত এনেছে প্রণব মজুমদারের প্রবন্ধ আলোকিত ছায়ামানুষ, পাঞ্জেরী এনেছে দন্ত্যস রওশনের নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স এনেছে মশিউল আলমের শিশুতোষ তুয়া ও ভয়ঙ্কর বিড়ালেরা

আজ ফাগুনের প্রথম দিনে রঙিন হবে বইমেলার দৃশ্যপট। বিক্রেতারা আশা করছেন বিক্রিও বাড়বে। মেলা খুলবে বরাবরের মতোই বেলা তিনটায়, খোলা থাকবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

  • ঘরে বসে বইমেলার যেকোনো বই পেতে: ০১৭৩০০০০৬১৯