কক্সবাজারের টেকনাফের হাজমপাড়া সৈকতে পূর্ণিমার জোয়ারে ভেসে আসে অলিভ রিডলে প্রজাতির মৃত মা কাছিম। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
কক্সবাজারের টেকনাফের হাজমপাড়া সৈকতে পূর্ণিমার জোয়ারে ভেসে আসে অলিভ রিডলে প্রজাতির মৃত মা কাছিম। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পর্যটক, শিকারি ও যানবাহন বিপদ বাড়াচ্ছে কাছিমের

দেশে নদ-নদীর পর এবার পাহাড় ও সমুদ্রের কাছিমও বিপদে পড়ছে। বিশ্বে বিপন্ন জলপাইরঙা সামুদ্রিক কাছিম ছাড়াও সবুজ সামুদ্রিক কাছিম এখনো কক্সবাজার উপকূল থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম উপকূলে আসে ডিম পাড়তে। সাগরে ডিম পেড়ে তা থেকে বাচ্চা ফোটাতে সৈকতের বালুতে রাখতে আসে এরা। আর তাতে এদের বিপদ বাড়ছে। বিপদে সুন্দরবনে বিচরণ করা মহাবিপন্ন প্রজাতির বাটাগুড় বাসকা কাছিমও।

পর্যটকদের উৎপাত, শিকারিদের আনাগোনা আর সৈকতের যেখানে-সেখানে যানবাহনের চলাচলে এসব ডিম ফুটতে পারছে না। অন্যদিকে আরেক বিপন্ন প্রজাতির পাহাড়ি শিলা কাছিম শিকারিদের কবলে বেশি পড়ছে।

দেশে কাছিমের সবচেয়ে বড় বিপদ তৈরি হচ্ছে এদের বসতি এলাকা ধ্বংস হওয়া ও মানুষের শিকারে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে। যে কারণে বসতি এলাকা রক্ষার পাশাপাশি ডিম ফোটানোর পর বাচ্চা প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এদের রক্ষা করতে হবে।
মো. ফরিদ আহসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নিউমারেরি অধ্যাপক

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের হিসাবে, বাংলাদেশে মোট ২৫ প্রজাতির কাছিম রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি স্বাদু পানি ও পাহাড়ি এলাকার। পাঁচটি সমুদ্রের। সামগ্রিকভাবে কচ্ছপের প্রজাতির সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ব্রাজিলে।

সমুদ্রসৈকতে বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ 
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা আমেরিকান টরটয়েজ রেসকিউর উদ্যোগে কচ্ছপ রক্ষায় নজর বাড়াতে ২০০০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ২৩ মে (আজ বৃহস্পতিবার) কচ্ছপ দিবস পালন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের কাছিমের বিপদ বা ঝুঁকি নিয়ে অধ্যাপক ফরিদ আহসান ২০২২ সালে একটি গবেষণা করেন। সেখানে মোট ১১টি বিপদ চিহ্নিত করেন তিনি। প্রথমত পর্যটকদের উৎপাত, শিকারিদের তৎপরতা, সাগরে কাছিমের ডিম রাখার জায়গায় আলো ফেলা অন্যতম।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে কাছিম রক্ষায় কাজ করা প্রাণী বিশেষজ্ঞ দল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নিউমারেরি অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে কাছিমের সবচেয়ে বড় বিপদ তৈরি হচ্ছে এদের বসতি এলাকা ধ্বংস হওয়া ও মানুষের শিকারে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে। যে কারণে বসতি এলাকা রক্ষার পাশাপাশি ডিম ফোটানোর পর বাচ্চা প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এদের রক্ষা করতে হবে।

আমরা কচ্ছপের প্রজাতি সংরক্ষণে যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, তা বেশ সফলতার মুখ দেখছে। মহাবিপন্ন প্রজাতির বাটাগুড় বাসকা, পাহাড়ি শিলা ও হলুদ কেটো কচ্ছপের প্রজননে সহায়তা করছি। ফলে মহাবিপন্ন অবস্থা থেকে রক্ষার পাশাপাশি সংখ্যাও বাড়ছে এসব কাছিমের।  
আমীর হোসেন চৌধুরী, প্রধান বন সংরক্ষক

অধ্যাপক ফরিদ আহসান ২০২২ সালে বাংলাদেশের কাছিমের বিপদ বা ঝুঁকি নিয়ে একটি গবেষণা করেন। সেখানে প্রাণীটির মোট ১১টি বিপদ চিহ্নিত করেন তিনি। প্রথমত, পর্যটকদের উৎপাত, শিকারিদের তৎপরতা, সাগরে কাছিমের ডিম রাখার জায়গায় আলো ফেলা অন্যতম।

কাছিম রক্ষায় কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা

সৈকতের বালুতে কচ্ছপের ডিম  

এসব কাছিম রক্ষায় ডিম সংরক্ষণ ও বাচ্চা ফোটানোর কাজে বড় ধরনের সফলতা পেয়েছেন বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। গত ৩ বছরে ১৯ হাজার জলপাইরঙা সামুদ্রিক কাছিমের বাচ্চা কৃত্রিমভাবে ফুটিয়ে সাগরে ছাড়া হয়েছে। টেকনাফ ও কক্সবাজারে হ্যাচারি স্থাপন করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সাগরে ছাড়া হচ্ছে। বন বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে এসব কাজে সফলতা পেয়েছে তিনটি বেসরকারি সংস্থা।

অন্যদিকে পাহাড়ি শিলা ও পাহাড়ি হলুদ কাছিম ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এগুলোর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা জন্মানোর পর তা কিছুটা বড় করে পাহাড়ে নিয়ে ছাড়া হচ্ছে। সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বাটাগুড় বাসকা কাছিমের। বিলুপ্তির হাত থেকে এগুলো রক্ষায় বিশেষভাবে কাজ করা হচ্ছে।

সৈকতের বালুতে কচ্ছপের ডিম  

কাছিম সংরক্ষণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছে টার্টেল অ্যালায়েন্স, কোডেক, ন্যাকমসহ বেশ কিছু সংস্থা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক অনেক বছর ধরে কাছিম সংরক্ষণ ও এর প্রজনন নিয়ে গবেষণা করছেন।

এসব বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কচ্ছপের প্রজাতি সংরক্ষণে যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, তা বেশ সফলতার মুখ দেখছে। মহাবিপন্ন প্রজাতির বাটাগুড় বাসকা, পাহাড়ি শিলা ও হলুদ কেটো কচ্ছপের প্রজননে সহায়তা করছি। ফলে মহাবিপন্ন অবস্থা থেকে রক্ষার পাশাপাশি সংখ্যাও বাড়ছে এসব কাছিমের।’