রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে দুই দিনের সংগীতানুষ্ঠান শুরু হয় বৃহস্পতিবার
রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে দুই দিনের সংগীতানুষ্ঠান শুরু হয় বৃহস্পতিবার

বেঙ্গলে দুই দিনের সংগীতানুষ্ঠান: সুরের মূর্ছনায় মুখর শীতের সন্ধ্যা

সংগীতানুরাগীদের জন্য গানের সুরে মগ্ন হয়ে শীতের সন্ধ্যা কাটানোর আয়োজন করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দুই দিনের এই আসর শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার।

প্রথম দিনের সংগীতসন্ধ্যায় ছিল কণ্ঠে ও যন্ত্রে বিভিন্ন অঙ্গের ঠুমরির পরিবেশনা। এতে অংশ নেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের অগ্রজ শিল্পীরা। রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এই অনুষ্ঠানের সূচনায় শ্রোতাদের স্বাগত জানান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।

ঠুমরির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, এই গান অনেকটা নিজের সঙ্গে কথা বলার মতো। আপন রাগ, বিরাগ, দুঃখ, না পাওয়ার কষ্টের গল্পগুলো ঠুমরির মাধ্যমে এমন করে পরিবেশন করা হয়, যেন সামনে বসা মানুষটির চোখ ভিজে আসে। প্রেম, বিরহ, ব্যাকুলতাই এর প্রধান বিষয়।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বলেন, ঠুমরির মূল কেন্দ্র ছিল ভারতের রায়পুর, লক্ষ্ণৌ, গয়া, বেনারস এলাকা। এই অঞ্চলের লোকগানের প্রভাব ঠুমরি, কাজরি, চৈতি—এসব গানে রয়েছে। বাংলা অঞ্চলে ঠুমরির প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন লক্ষ্ণৌর শেষ নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ। ব্রিটিশ শাসকেরা তাঁকে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। সংগীতরসিক নবাব নিজেও ‘কদরপিয়া’ নামে অনেক ‘বন্দিশ’ রচনা করেছিলেন।

সংগীতজ্ঞদের মতে, ২৫ বছর ঠিকঠাক খেয়াল চর্চা না করলে ঠুমরি গাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায় না। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের অগ্রজ শিল্পীরা গত প্রায় ১০ বছর শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছেন পণ্ডিত উল্লাস কশলকার, পণ্ডিত তেজন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার ও শ্রী দেবাশীষ হালদারের কাছে। তাঁরা পরিবেশন করেন বিভিন্ন ধরন ও আঙ্গিকের ঠুমরি।

বৃহস্পতিবার গানের মালা সাজানো হয়েছিল কণ্ঠে ঠুমরি, দাদরা, কাজরি, চৈতি, সাদ্রার সঙ্গে সেতার-সারেঙ্গির ধুন পরিবেশনা দিয়ে। শুরু হয়েছিল সুস্মিতা দেবনাথের গাওয়া দাদরা ‘বালামুয়া কিত গায়ে’ দিয়ে। সুপ্রিয়া দাশ পরিবেশন করেছেন ঠুমরি ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’। শৌণক দেবনাথ সারেঙ্গিতে বাজিয়েছেন ঠুমরি ‘কা কারু সজনি’ এবং ধুন বাজিয়েছ ‘কেসারিয়া বালাম’।

দ্বৈত কণ্ঠে কাজরি ‘বারসান লাগি বাদারিয়া’ গেয়েছেন সুপ্রিয়া দাশ ও সুস্মিতা দেবনাথ। সরোদে ধুন ‘ভেজা মেরে খোল’ বাজিয়েছেন ইসরা ফুলঝুরি খান। অভিজিৎ কুণ্ড গেয়েছেন সাদ্রা ‘ভবানী দয়ানী’। সুপ্রিয়া দাশ শুনিয়েছেন চৈতি ‘চৈত মাস বলে লে’। তবলায় সংগত করেছেন ইফতেখার আলম প্রধান। হারমোনিয়ামে ছিলেন শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে রবীন্দ্রসংগীতানুষ্ঠান। শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। শ্রোতাদের গান শোনাবেন শিল্পী লাইসা আহমদ ও তাহমিদ ওয়াসীফ।