দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত তাদের আগামী সাধারণ নির্বাচনের পর ঢাকার সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তখন দুই দেশই এ বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ভারত সফর শেষে আজ সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
চলতি বছরের মাঝামাঝি ভারতের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ভারতের নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন আটকে থাকা তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিসহ গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে ঢাকা ও দিল্লি কাজ করবে সম্মত হয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি এবং গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছি। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যাটা রাজ্য সরকারের। ভারতের নির্বাচন সামনে। ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যেটা আলোচনা হয়েছে, নির্বাচনের পর এ বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাব।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি তাঁর সরকারের সেই মেয়াদকালের (২০১৯) মধ্যে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সেই চুক্তি এখনো হয়নি।
গঙ্গা চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে তাদের দ্বিমত নেই। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
সীমান্তে নন-লিথাল অস্ত্র ব্যবহারে সম্মত
সীমান্ত হত্যা কমাতে নন-লিথাল অস্ত্র (প্রাণঘাতী নয় এমন) ব্যবহারের বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্তে যাতে নন–লিথাল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলো নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ভারত আমার সঙ্গে একমত, যদি নন-লিথাল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাহলে সীমান্তে হত্যা অনেকটা কমে যাবে। সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
এদিকে ভারতের ভিসা পেতে বাংলাদেশির বিভিন্ন সময়ে যেসব বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, সে বিষয়টি দিল্লি সফরে তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ভিসা প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করার ওপর জোর দেন।
ভারত থেকে আসবে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ
রমজানের আগে ভারত বাংলাদেশে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং ১০ হাজার টন চিনি রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে পেঁয়াজের পরিমাণ ৫০ হাজার টন ও চিনি ১ লাখ টন করতে দিল্লিকে অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
ভোগ্যপণ্যে বিশেষ কোটা
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠকের উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক কিছুর (ভোগ্যপণ্য) জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। তাই এসব ভোগ্যপণ্যে যেন বিশেষ কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানানো হয়েছে। এটি হলে তাদের কাছ থেকে এসব পণ্য সঠিক মূল্যে এবং নিজেদের প্রয়োজনে আমদানি করা যাবে।
ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ
৭ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এ সফরে তিনি দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কাজ চলছে।