১৬ বছর ১০ মাস বয়সী কলেজশিক্ষার্থীকে রাজধানীর মিরপুর থানায় নাশকতার মামলায় এভাবে আদালতে তোলা হয়। গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে
১৬ বছর ১০ মাস বয়সী কলেজশিক্ষার্থীকে রাজধানীর মিরপুর থানায় নাশকতার মামলায় এভাবে আদালতে তোলা হয়। গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে

আবার হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নেওয়া হলো কিশোরকে

জন্মসনদ অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া ছেলেটির বয়স ১৬ বছর ১০ মাস; কিন্তু মিরপুর থানা–পুলিশ তার বয়স ১৮ বছর উল্লেখ করে এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেয় পুলিশ।

পরে শিশুটির আইনজীবী আদালতে জন্মসনদ জমা দেন। তাঁকে শিশু হিসেবে গণ্য করে মামলাটি শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৮ শিশুটিকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওই কলেজছাত্র আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, তার গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে। মিরপুরের একটি হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে। গতকাল সোমবার দুপুরে তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুর–১০ গোল চত্বরে যায়। তখন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। সে বারবারই বলেছিল, গত বছর সে মাধ্যমিক পাস করেছে। তাঁর বয়স ১৮ বছর না।

গতকাল শিশুটিকে যখন আদালত কক্ষে আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয়, তখনো তার হাতে হাতকড়া ছিল। শিশুটি বারবারই বলছিল, সে হাঁপানি রোগে আক্রান্ত।

শিশুটির আইনজীবী মোহাম্মদ মইন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তার মক্কেল কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নয়। আইন অনুযায়ী, সে শিশু। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর বিচার কখনো পূর্ণবয়স্ক আসামির সঙ্গে হওয়ার সুযোগ নেই। শিশুদের মামলার বিচার হবে শিশু আদালতে।

ওই কলেজছাত্রের বয়স মামলায় ১৮ বছর দেখানোর বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যখন ওই কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন সে নিজের বয়স ১৮ বছর বলেছিল। এ জন্য মামলার প্রতিবেদনে তার বয়স ১৮ দেখানো হয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, যে ছেলেটি বলছে, তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস; তাকে কেন মামলায় ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য আইনের ব্যত্যয় ঘটাবেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় এনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। জবাবদিহি না থাকায় আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের পূর্ণবয়স্ক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। এতে শিশুরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি যাত্রাবাড়ী থানায় করা পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় আইনের সংস্পর্শে আসা আরেকজন কিশোরের প্রকৃত বয়স ১৭ বছর। কিন্তু পুলিশ মামলায় তার বয়স ১৯ দেখিয়েছিল। পরে ঢাকার সিএমএম আদালত তাকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। অথচ ওই কিশোরের পক্ষ থেকে জন্মসনদ জমা দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছিল, তার বয়স ১৮ নয়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে শিশু গণ্য করে ও রিমান্ড বাতিল করে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন শিশু আদালত।