বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের দুটি বিধান প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই আইনের অধীন করা কাজ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং চুক্তি করার ক্ষেত্রে মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বিধান দুটিতে বলা আছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনটি ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর প্রণয়ন করা হয়। আইনের ‘পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার’সংক্রান্ত ৬(২) উপধারা ও ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’সংক্রান্ত ৯ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও আইনজীবী মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম আবেদনকারী হয়ে গত সপ্তাহে রিটটি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী শাহদীন মালিক শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাথিকা হোসেন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ওবায়দুর রহমান তারেক।
ওই আইন সাধারণত কুইক রেন্টাল আইন নামে পরিচিত উল্লেখ করে আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনের ৬(২) উপধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী একক বিবেচনায় ব্যক্তি বা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চুক্তি সই করতে পারবেন। অথচ সরকারের সব ক্রয় একটি প্রক্রিয়া তথা দরপত্র প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে হয়। এই উপধারার মাধ্যমে মন্ত্রীর একক বিবেচনায় তার যাকে ইচ্ছা তাকে এবং যত টাকায় ইচ্ছায় তত টাকায় চুক্তি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো সভ্য রাষ্ট্রে কোনো মন্ত্রীর এ ধরনের একক ক্ষমতা থাকতে পারে না। আর আইনের ৯ ধারায় এ-সংক্রান্ত কাজ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলা হয়েছে। আদালতের এখতিয়ার রদ করতে পারে, এমন কোনো আইন হতে পারে না। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট চার সপ্তাহের জন্য রুল দিয়েছেন।’
সংবিধানের নির্দেশনার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় ওই আইনের ৬(২) এবং ৯ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং বিভাগের সচিব; অর্থ বিভাগের সচিব; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব; পেট্রোবাংলা ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার’সংক্রান্ত আইনের ৬(২) উপধারার ভাষ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণক্রমে যেকোনো ক্রয়, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ধারা ৫–এ বর্ণিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটি সীমিতসংখ্যক অথবা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও দর–কষাকষির মাধ্যমে ওই কাজের জন্য মনোনীত করে ধারা ৭–এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অর্থনৈতিক বিষয় বা সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’-সংক্রান্ত ৯ ধারা অনুযায়ী, এই আইনের অধীন করা বা করা হয়েছে বলে বিবেচিত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।