সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় দণ্ডিত জামিনে থাকা বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন।
চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আমানউল্লাহর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, আগামী ৯ জুনের মধ্যে আমানউল্লাহকে দেশে ফিরতে হবে। এ বিষয়ে আদালতে কমপ্লায়েন্স (প্রতিবেদন) দিতে হবে।
মামলাটিতে ১৩ বছর কারাদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আমানউল্লাহর আপিলের ওপর পুনঃশুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ মে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রাখা হয়।
এই রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতের গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে আমানউল্লাহকে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত বছরের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পণের পর আমানউল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ-১ আদালত।
এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আমানউল্লাহ, সঙ্গে জামিন আবেদন ছিল।
লিভ টু আপিলটি গত ৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত শুনানির জন্য লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।
শুনানি নিয়ে গত ১৪ জানুয়ারি আপিল বিভাগ আমানউল্লাহর লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। এরপর নিয়মিত আপিলের পাশাপাশি জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি।
শুনানি নিয়ে গত ২০ মার্চ আমানউল্লাহর জামিন মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন অবস্থায় আমানউল্লাহ বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে আদালতের (আপিল বিভাগ) অনুমতি নিতে হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
জামিন মঞ্জুরের পর গত ২৫ মার্চ কারামুক্তি পান আমানউল্লাহ। এরপর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তিনি, যা আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে।
আজ আদালতে আমানউল্লাহর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী নাজমুল হুদা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে আইনজীবী নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য আমানউল্লাহকে বিদেশ যেতে অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে যাবেন। অবশ্য আদালত বলেছেন, আগামী ৯ জুনের মধ্যে তাঁকে দেশে ফিরতে হবে। এরপর আদালতে এ বিষয়ে কমপ্লায়েন্স (প্রতিবেদন) দিতে হবে।
আপিল বিভাগ চিকিৎসার জন্য আমানউল্লাহকে সিঙ্গাপুর যেতে অনুমতি দিয়েছেন বলে জানান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাসের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমানউল্লাহ দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। একই বছরের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালত আমানউল্লাহকে ১৩ বছর এবং তাঁর স্ত্রী সাবেরা আমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল মঞ্জুর করে আমানউল্লাহ দম্পতিকে খালাস দেন। এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল করে। ২০১৪ সালের ২৬ মে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টে আপিল পুনঃশুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের এই রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন আমানউল্লাহ। পরে তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
পুনঃশুনানি শেষে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছরের ৭ আগস্ট প্রকাশিত হয়। এরপর আমানউল্লাহর স্ত্রী সাবেরা গত ৩ সেপ্টেম্বর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পুনঃশুনানি শেষে তিন বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তিনি লিভ টু আপিল করেন, জামিন চান। শুনানি নিয়ে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চেম্বার আদালত থেকে জামিন পান তিনি।