তরুণ কবিরা পড়লেন জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা তাঁদের কবিতা। আজ বুধবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমিতে
তরুণ কবিরা পড়লেন জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা তাঁদের কবিতা। আজ বুধবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমিতে

বিজয় বইমেলায় তরুণ কবিরা

কবিতা লিখেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদেরা

কবিতার ছন্দ ও গানের সুরের সঙ্গে প্রাঞ্জল আলোচনায় বিজয় বইমেলার মঞ্চ আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুখর হয়ে উঠেছিল। তরুণ কবিরা পড়লেন জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা তাঁদের কবিতা। তাঁরা বললেন, এসব কবিতা আসলে লিখেছেন ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করতে রাজপথে নেমে জীবন উৎসর্গ করা শহীদেরা। গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিপেটায় আহত ব্যক্তিরা। জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাজপথে মিছিল নিয়ে নেমে আসা অগণিত শিশু–কিশোর, তরুণ ও প্রবীণ নর–নারীরা।

শীতের শেষ বেলায় প্রথমা প্রকাশন আয়োজিত বিজয়ের বইমেলার মঞ্চে কবিকণ্ঠে ‘গণ-অভ্যুত্থানের কবিতা পাঠ ও আলোচনা’ পর্ব শুরু হয়েছিল জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রথমা প্রকাশনের শিশুসাহিত্য সহযোগী সাইদুজ্জামান রওশন।

কবিতাপাঠ পর্বের সঞ্চালক ছিলেন প্রথমা ডটকমের দায়িত্বপ্রাপ্ত তরুণ কবি রাসেল রায়হান। তিনি বললেন, এ সময়ের তরুণ কবিরা কেবল লেখালেখির মধ্যেই নিজেদের সীমিত রাখেননি। তাঁরা বিভিন্নভাবে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকেছেন, কেউ কেউ সরাসরি রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছেন।

কবিরা তাঁদের কবিতা পাঠের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোর অভিজ্ঞতার কথাও বলেন সংক্ষেপে। এতে আয়োজনটি ভিন্নতা পেয়েছিল।

কবিরা তাঁদের কবিতার পটভূমি সম্পর্কেও কিছুটা আলোকপাত করেন। অনেকে বলেন তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। যেমন আশরাফ জুয়েল বলেছিলেন, আসলে কবিদের মাধ্যমে শহীদেরা, আহতরাই কবিতা লিখেছেন। রওশন আরা মুক্তার ‘গোল্ডফিশের কান্না’ কবিতাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তিনি বলেন, হতাহতের বিবরণ না দিয়ে যখন সরকারি প্রচারযন্ত্রে মেট্রোরেল, ডেটাসেন্টারের ক্ষয়ক্ষতির কথা ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছিল, তখন তিনি এই কবিতা লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। পরে ভয়ে ভয়ে দিন কেটেছে, হয়তো তাঁকে তুলে নিয়ে ‘আয়নাঘরে’ বন্দী করা হবে।

তরুণ কবিরা তাঁদের কথা ও কবিতায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ক্ষোভ, শঙ্কা, সাহস ও দ্রোহের কথা বলেছেন। তুলে ধরেছেন অচলায়তন ভেঙে নতুন সম্ভাবনার উন্মেষের কথা। তাঁরা বলেন, যে নতুন পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি হয়েছে, তাকে শিল্পসাহিত্যের মাধ্যমে ধারণ করে ইতিহাসের আকরে পরিণত করতে হবে। তা করা না গেলে জনগণের স্মৃতিতে সঞ্চিত জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনাবলি একটা সময় হারিয়ে যাবে।

কবিতাপাঠ পর্বে অংশ নিয়েছিলেন কবি নকিব মুকশি, শামশাম তাজিল, মাহফুজা অনন্যা, মৃদুল মাহবুব, আশরাফ জুয়েল, শতাব্দীকা উর্মি, জব্বার আল নাঈম, জুয়েল মোস্তাফিজ, সাম্য শাহ, তুহিন খান, উম্মে রায়হানা, সরকার মোহাম্মদ জারিফ, সৈয়দা নীলিমা দোলা, হিজল জোবায়ের ও রওশন আরা মুক্তা। কবিতা পাঠের ফাঁকে ফাঁকে গান গেয়ে শুনিয়েছেন শিল্পী জাহিদ অন্তু ও আহমেদ হাসান সানি।

পরে আলোচনায় প্রথম আলোর সাহিত্য পাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে যেমন রাজনৈতিক সামাজিক পটপরিবর্তন ঘটেছে, তেমনি সাহিত্যেও একটি নতুন ভাষা তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তরুণ কবি-লেখকদের লেখায় এই নতুন বাগ্‌ভঙ্গির সূচনা দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই। তখন নানা প্রতীক–উপমায় কবিরা অনেকটা অপ্রত্যক্ষভাবে তাঁদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের কথা বলেছেন। ক্রমে তাঁদের বাচনভঙ্গি আরও স্পষ্ট হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পরে জনগণের অভীপ্সাকে ধারণ করার যে চেষ্টা কবি-লেখকেরা করে চলেছেন, তাঁদের ভাষাতেও ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। নতুন একটি সাহিত্যিক ভাষার অভ্যুদয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাষা ভবিষ্যতে আরও বিকশিত হয়ে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

১৩ ডিসেম্বর থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে প্রথমা প্রকাশনের আয়োজনে শুরু হয়েছে ১০ দিনের বিজয় বইমেলা। মেলা প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা, চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করছে এইচএসবিসি ব্যাংক।

বইমেলায় প্রথমা প্রকাশনের বই ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ, অন্য প্রকাশনীর বই ২৫ শতাংশ এবং বিদেশি বই সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড়ে কেনা যাবে।

আগামীকালের অনুষ্ঠান

বিকেল চারটায় মেলা মঞ্চে থাকবে আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনা করবেন লেখক মহিউদ্দিন আহমদ ও মোরশেদ শফিউল হাসান।