অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ

শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদিত হতো কারখানাটিতে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়া অক্সিজেন কারখানার চিত্র। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের যে কারখানায় আজ শনিবার বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, সেটিতে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদিত হতো। জাহাজভাঙা কারখানায় লোহা কাটার কাজে অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। যে সরঞ্জাম দিয়ে লোহা কাটা হয়, তা ‘গ্যাস কাটার’ নামে পরিচিত। পাশাপাশি ইস্পাতের কারখানায়ও কিছু অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।

আজ বিকেল চারটার দিকে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে নামের কারখানাটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। কারখানাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে। বিস্ফোরণে আজ রাত সোয়া নয়টা পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।

বিস্ফোরণে সীমা অক্সিজেন কারখানা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে আশপাশের তিন কিলোমিটার দূর থেকেও। জানা গেছে, বিস্ফোরণের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে এর ফলে দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়ে যাওয়া একটি লোহার টুকরার আঘাতে আধা কিলোমিটার দূরে এক ব্যক্তি নিহত হন। দুর্ঘটনার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে ফায়ার সার্ভিস।

সূত্র জানিয়েছে, সীমা অক্সিজেন লিমিটেড সীমা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি চট্টগ্রামের মাঝারি আকারের ব্যবসা পরিসরের একটি শিল্পগোষ্ঠী, যাদের ইস্পাত কারখানা, জাহাজভাঙা কারখানা ও অক্সিজেন কারখানা রয়েছে। প্রয়াত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। এখন তাঁর সন্তানেরা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালে জাহাজভাঙা কারখানা দিয়ে সীমা গ্রুপের ব্যবসা শুরু হয়। জাহাজভাঙার লোহা কাটার জন্য দরকার অক্সিজেন। চাহিদার কারণেই ১৯৯৭ সালে অক্সিজেন কারখানা স্থাপন করেন মোহাম্মদ শফি।

২০০৩ সাল থেকে ইস্পাতপণ্য রড উৎপাদনের কারখানা করে সীমা গ্রুপ। প্রতিষ্ঠা করে সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস। কারখানাটিতে নিজেদের জাহাজভাঙা কারখানা থেকে পাওয়া লোহার টুকরা ব্যবহৃত হয়। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সীমা অক্সিজেন কারখানার উৎপাদনক্ষমতা প্রতিদিন ৭০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন। তবে উৎপাদিত হতো দিনে ৪০০ থেকে ৪৫০ সিলিন্ডার। প্রতি সিলিন্ডারে ৯ ঘনমিটার অক্সিজেন থাকে।

অক্সিজেন কারখানার মূল কাঁচামাল বাতাস। বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা করাই কারখানার মূল কাজ। এরপর সিলিন্ডারে ভরে তা সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন কারখানায়।

সীমা অক্সিজেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, অক্সিজেন কারখানায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিলিন্ডারের মেয়াদ আছে কি না বা কার্যকরী ক্ষমতা আছে কি না, তা যাচাই করা। তাঁদের কারখানায় সিলিন্ডার পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি রয়েছে। নিয়মিত সিলিন্ডার পরীক্ষাও করা হয়। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো তাঁরা নিশ্চিত নন। বুঝতেও পারছেন না।

সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে

সীমা অক্সিজেন কারখানার উৎপাদিত অক্সিজেন একসময় কোম্পানির জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে ২০১৯ সালের পর কোম্পানির জাহাজভাঙা কারখানা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এখন উৎপাদিত অক্সিজেনের প্রায় পুরোটাই অন্য কারখানার কাছে বিক্রি করা হয়। সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন কোম্পানির সীমা অটোমেটিক স্টিল রি-রোলিং মিলে ব্যবহৃত হয়। রি-রোলিং মিলে বিলেট (লোহার বড় বড় পাত) কাটার কাজে ব্যবহৃত হয় অক্সিজেন।

দেশের বড় দুটি কারখানা আবুল খায়ের ও জিপিএইচ ইস্পাতে রড উৎপাদনে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয় তরল লোহা বিশুদ্ধকরণের কাজে।