নির্দেশনা জারি

জন্মসনদে থাকা জন্মতারিখ সহজে পরিবর্তন করা যাবে না

আইন অনুযায়ী, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সবার জন্য বাধ্যতামূলক। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন এবং মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন করতে হয়
আইন অনুযায়ী, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সবার জন্য বাধ্যতামূলক। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন এবং মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন করতে হয়

এখন থেকে জন্মনিবন্ধন সনদে থাকা জন্মতারিখ সহজে পরিবর্তন করা যাবে না। জন্মসনদ নেওয়ার পর কোনো ব্যক্তি পাবলিক পরীক্ষার নিবন্ধনপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টে ভিন্ন জন্মতারিখ ব্যবহার করলে এবং পরে এই পরিবর্তিত জন্মতারিখ বহাল রাখার জন্য জন্মসনদ সংশোধনের আবেদন করলে, তা আর গ্রহণ করা হবে না।

‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন’ গত ৬ ফেব্রুয়ারি নতুন এই নির্দেশনা জারি করেছে। দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, বিদেশে অবস্থিত মিশনের নিবন্ধকদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে জন্মসনদ নেওয়ার আগে যাঁরা পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে যেকোনো একটি তথ্যকে জন্মতারিখের দালিলিক প্রমাণ হিসেবে ধরে জন্মনিবন্ধনের নতুন আবেদন নেওয়া হবে।

নতুন নির্দেশনার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) মো. রাশেদুল হাসান তাঁর কার্যালয়ে বসে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধরুন, একটি শিশুর জন্মসনদ আছে। কিন্তু তার এসএসসি পরীক্ষার নিবন্ধনপত্রে ভিন্ন একটি জন্মতারিখ ব্যবহার করা হলো। পরে এই ফরমায়েশি জন্মতারিখ বহাল রাখতে জন্মসনদ সংশোধনের আবেদন করা হলো। এই ধরনের আবেদন এখন থেকে আর গ্রহণ করা হবে না।’

কোনো কারণে জন্মসনদে জন্মতারিখ ভুল থাকলে তা সংশোধনের উপায় কী হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, ‘ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণের আলোকে জন্মসনদ সংশোধন করা হবে।’

রাশেদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, পাসপোর্ট আছে, কিন্তু জন্মসনদ নেই। এসব ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা পাবলিক পরীক্ষার নিবন্ধনপত্র বা স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় ব্যবহার করা জন্মতারিখ বা চাকরি করে থাকলে নিয়োগের সার্ভিস বুকে লেখা জন্মতারিখ দিয়ে জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কারও এসবের কিছুই না থাকলে নিবন্ধক আবেদনকারীর বিষয় তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে আবেদন নিতে পারবেন।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮-এর মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়। কাজটিকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নির্দেশিকা ২০২১ প্রণয়ন করা হয়। আইন অনুযায়ী, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সবার জন্য বাধ্যতামূলক। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন এবং মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন করতে হয়।

৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা নির্দেশনাটির শিরোনাম: ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদে জন্মতারিখ, সাল পরিবর্তনে আবেদন গ্রহণ, আপলোডকরণ এবং অনুমোদনের লক্ষ্যে প্রেরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন’।

নির্দেশনায় বলা হয়, আইন-বিধিতে শিশুর জন্মের পরপর এবং ব্যক্তির মৃত্যুর পরপর এ-সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধককে দেওয়া ও নিবন্ধনের তাগিদ রয়েছে। শিশুর ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদে লিখিত তারিখ তার প্রথম ও আদি জন্মতারিখ। এ তারিখের ভিত্তিতেই তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়ে থাকে। কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিক পরীক্ষায় নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, পাসপোর্ট করার সময় জন্মনিবন্ধন সনদে উল্লেখ করা জন্মতারিখের পরিবর্তে অন্য একটি জন্মতারিখ বসানো হয়। পরবর্তী সময়ে পাবলিক পরীক্ষার নিবন্ধনপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের আদলে জন্মসনদ বিশেষ করে জন্মতারিখ সংশোধন করে দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করা হয়। নিবন্ধক কার্যালয় এসব আবেদন গ্রহণ করে, আপলোড করে ও অনুমোদনের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠায়। এটা সমীচীন নয়।

নিবন্ধক কার্যালয়গুলোর প্রতি রেজিস্ট্রার জেনারেলের নির্দেশনায় বলা হয়, জন্মসনদের মূল জন্মতারিখ পরিবর্তন করে পাবলিক পরীক্ষা, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট তৈরি করে জন্মতারিখ বা জন্ম সাল পরিবর্তনের আবেদন যেন গ্রহণ না করা হয়, আপলোড না করা হয় এবং অনুমোদনের জন্য যেন না পাঠানো হয়, তার অনুরোধ করা হলো। এ ধরনের আবেদন মোটেও অনুমোদনযোগ্য নয়।