চট্টগ্রামের তিনটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ আশরাফুল আলম নামের এই ব্যক্তির সন্ধান পায়।
যশোরের শার্শা উপজেলার মনিহারি দোকানি আশরাফুল আলম। পরিচয়ে দোকানি হলেও মূলত তিনি করেন জন্মনিবন্ধন তৈরির কাজ। তাঁর কাছে রয়েছে জন্মনিবন্ধনের সরকারি সার্ভারের পাসওয়ার্ড। নিজের দোকানে বসেই সারা দেশের যেকোনো ঠিকানায় অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংযুক্ত (এন্ট্রি) ও সংশোধন করতে পারেন।
চট্টগ্রাম নগরে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮টি জন্মসনদ (১২টি রোহিঙ্গা) নেওয়ার ঘটনায় গত বছরের জুনে করা তিনটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আশরাফুলের খোঁজ পায়। গত বৃহস্পতিবার রাতে শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
শার্শার বাগআঁচড়া এলাকায় এই মনিহারি দোকান। ৩৯ বছরের আশরাফুল পড়াশোনা করেছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। গতকাল শুক্রবার পুলিশের উপস্থিতিতে আশরাফুল বলেন, ২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগের সাবেক প্রোগ্রামার (ডেভেলপার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার) মো. খালিদের কাছ থেকে পাওয়া লিংক ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে তিনি সার্ভারে ঢুকে এ কাজ করে আসছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষের জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংযুক্ত করেছেন। তাঁর মতো আরও ছয় থেকে সাতজন রয়েছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্ট তৈরিসহ নানা কাজে জন্মনিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হয়। রোহিঙ্গারা জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে পাসপোর্ট ও এনআইডি করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা পড়ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে। পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাগুলো তদন্ত করছে।
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এবং উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে করা জন্মনিবন্ধন জালিয়াতির মামলা তিনটি তদন্ত করছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের উপপরিদর্শক স্বপন কুমার সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আশরাফুল জন্মনিবন্ধন সার্ভারে ঢুকে দেশের যেকোনো স্থানের ঠিকানায় তথ্য সংযুক্ত করার কথা স্বীকার করেছেন। একটি জন্মনিবন্ধনের জন্য নেন এক থেকে দেড় হাজার টাকা। পাসওয়ার্ড দেওয়া খালিদকে দিতেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, রাজশাহী, যশোরের বিভিন্ন এলাকার দালালের মাধ্যমে কাজ নিতেন আশরাফুল। গতকাল বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, পুলিশের কাছ থেকে বিস্তারিত পাওয়ার পর তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খালিদ নামের তাঁদের একজন প্রোগ্রামার ছিলেন, এখন নেই।