প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগরের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে পুরোদমে উৎপাদন চলছে। আরও দুটি প্রতিষ্ঠান দুই মাসের মধ্যে উৎপাদনে যাচ্ছে। শিল্পনগরে বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা হচ্ছে। এ কারখানায় লিথিয়াম ব্যাটারিও তৈরি হবে। ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার এ কারখানা শিগগিরই উৎপাদনে যাবে। সরকারি সংস্থা শিল্পনগরের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পরিশ্রম করছে। এতে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বেজা।
আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মুখ্য সচিব এসব কথা বলেন। মুখ্য সচিব বলেন, যেকোনো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক, সুয়ারেজ, বিদ্যুৎ, কেবল নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা—এসব বিষয় জরুরি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পাশাপাশি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগরে। ইতিমধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। ২২টি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া ১৫২টি প্রতিষ্ঠান জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা সন্দ্বীপ চ্যানেলের পাশে ১৩৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এই শিল্পনগর। বেজার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা ঘিরে এই শিল্পনগরের আয়তন ৩৩ হাজার ৮০৫ একর। এর ৪১ শতাংশ বা ১৪ হাজার একরে শুধু শিল্পকারখানা হবে। বাকি ৫৯ শতাংশ এলাকার মধ্যে আছে খোলা জায়গা, বনায়ন, বন্দর–সুবিধা, আবাসন, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ ও বিনোদনকেন্দ্র।
২০১৬ সালে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল নামে এর উদ্বোধন করা হয়। সেখানে জমি বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে বেজা। পরে ২০১৮ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে শিল্পনগরের নাম রাখা হয়।
মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, শিল্পনগরের আশপাশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। তাঁদের অবকাঠামোগত সুবিধা যাতে বৃদ্ধি পায়, সেটিও দেখা হবে। তিনি বলেন, এখানে ১৩৯টি পরিবার ছিল। তাদের সবাইকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। শুধু ঘর নয়, তাদের কর্মসংস্থানও হবে।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১৪ লাখ মানুষ কাজ করবেন বলে উল্লেখ করে মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এ বিশালসংখ্যক মানুষের নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা, এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। এখানে থানা তৈরি করতে হবে।
তবে জায়গা বরাদ্দ নিয়ে বিনিয়োগে আসছে না, এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। তিনি বলেন, বিনিয়োগে না আসা প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাতিল করা হবে। নতুন বিনিয়োগকারীকে ওই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
মুখ্যসচিব ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শিল্পনগরের তিনটি কারখানা পরিদর্শন করেন। এগুলো হলো এশিয়ান পেইন্টস, মডার্ন সিনটেক্স, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পরিদর্শনদলে আরও ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ প্রমুখ।