পুলিশের ছয় কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাঁদের অবসরে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। অপর দিকে পৃথক প্রজ্ঞাপনে পুলিশের অপর ৯ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
অবসরে পাঠানো পুলিশের ছয় কর্মকর্তা হলেন রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য্য, ঢাকায় সংযুক্ত শিল্পাঞ্চল পুলিশের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, ঢাকায় পুলিশ টেলিকমে কর্মরত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বশির আহম্মদ, ঢাকায় সংযুক্তির আদেশপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মীজানুর রহমান, এপিবিএন সদর দপ্তরে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার দাদন ফকির।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নম্বর আইন)–এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে এই কর্মকর্তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হলো। এসব কর্মকর্তা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধাদি পাবেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খন্দকার লুৎফুল কবির, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মীর রেজাউল আলম, নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্বে) ইমাম হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
২৭ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কৃষ্ণ পদ রায়, খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার (উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদা) মো. মোজাম্মেল হক ও কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক) সরদার রকিবুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ২২ আগস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মাহাবুবর রহমান ও পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জয়দেব কুমার ভদ্রকে অবসরে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, ১৩ আগস্ট সিআইডি থেকে মোহাম্মদ আলী মিয়াকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
২১ আগস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. আতিকুল ইসলাম, সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক-সুপারনিউমারারি) মো. আনোয়ার হোসেন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানকে (উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার) অবসরে পাঠানো হয়।
এর আগে ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আরেক প্রজ্ঞাপনে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি-বিশেষ শাখা) মনিরুল ইসলামকে এসবি থেকে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আর হাবিবুর রহমানকে ৭ আগস্ট ডিএমপি কমিশনারের পদ থেকে বদলি করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁদের দুজনকেই চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ (২২)। তিনি ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই সময় দায়িত্বে থাকা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান এবং পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক মো. আবদুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দিয়েছিল।
অপর দিকে বদলি হওয়া পুলিশের ১০ কর্মকর্তার মধ্যে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে বদলির আদেশপ্রাপ্ত উপপুলিশ কমিশনার আমিনুল ইসলামকে (সুপারনিউমারারি ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) রংপুর রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), সুপারনিউমারারি ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ঢাকার বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার এস এন মো. নজরুল ইসলামকে ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এ ছাড়া নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট এস এম রোকন উদ্দিনকে ঢাকায় পুলিশ স্টাফ কলেজে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলামকে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার, নীলফামারীর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট আবদুল্লাহ আল ফারুককে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার, ঢাকায় বিশেষ শাখার শেখ জাহিদুল ইসলামকে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার, বিশেষ শাখার (এসবি) মাহফুজুর রহমানকে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার, নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে নীলফামারীর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট, ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তর প্রসাদ পাঠককে ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এ ছাড়া খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদকে কুড়িগ্রামে পুলিশ সুপার হিসেবে যে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে।