ছাত্র–জনতা অভূত্থানে রাজধানীর উত্তরায় যারা হতাহত হয়েছেন, তাঁদের তালিকা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরায় নিহত হওয়া মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর হাতে তুলে দেওয়া হয়
ছাত্র–জনতা অভূত্থানে রাজধানীর উত্তরায় যারা হতাহত হয়েছেন, তাঁদের তালিকা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরায় নিহত হওয়া মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর হাতে তুলে দেওয়া হয়

উত্তরায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন ২৮ জন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী ১৯ জন। আহত হয়েছেন ১৯৭ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন একজন।

আজ শনিবার দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে উত্তরা’ নামের পেশাজীবী অভিভাবকদের একটি সংগঠন এই তালিকা প্রকাশ করেছে।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের সদস্য মনীষা মাফরুহা। পরে তালিকাটি তুলে দেওয়া হয় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরায় নিহত হওয়া মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর হাতে। এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে চারটি প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়।
মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এই সংগঠনটি আন্দোলনের কঠিন সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে, আমাদের পাশে ছিল। আমরা এখানে যে তালিকাটি পেয়েছি, সেটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা করব। পরে নিয়ম মেনে আহত ও নিহতের পরিবারকে সহায়তা করা হবে।’

কান্না ছড়িয়ে যায় সবার মধ্যে

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ছেলেকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাতেমাতুজ্জোহরা


অনুষ্ঠান অনুষ্ঠানের নিয়মে চলছে। সেখানে বক্তব্য দেন অনেকেই। কিন্তু সেদিকে যেন কোনো মন নেই ফাতেমাতুজ্জোহরার। মাথা নিচু করে বসে আছেন মঞ্চের এক কোণে। তাঁর ক্লান্ত চোখে ছলছল করছে পানি। কিছু বলতে তাঁকে ডাকা হলে এগিয়ে গেলেন মাইক্রোফোনের কাছে। কথা বলতে গিয়ে বাঁধ ভেঙে যায়, অঝোরে কাঁদতে থাকেন। সেই কান্না ছুঁয়ে যায় সবাইকে। গণমাধ্যমকর্মীসহ উপস্থিত সবার চোখই তখন ভিজে উঠেছে।
ফাতেমাতুজ্জোহরা হলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় নিহত একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বিন জাহিদের (১৬) মা।
এই মা বলেন, ‘আমার ছোট ছেলেটা ক্যানসার আক্রান্ত, মৃত্যুপথযাত্রী। বড় ছেলেটাই ছিল একমাত্র আশার আলো। কিন্তু এখন সেও নেই। ছেলের কথা ভাবতেই কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।’

আন্দোলনকারীদের পানি দিতে গিয়ে ডান হাতে গুরুতর আঘাত পান একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা তাবাসসুম। ঘটনার দুই মাস পরও বয়ে বেড়াচ্ছেন আঘাতের ক্ষত। অন্যদের মতো আজ তিনিও উপস্থিত হন সংবাদ সম্মেলনে।

কথা হলে তাবাসসুম বলেন, ‘আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার দেখে নিজেকে আর ঘরে আটকে রাখতে পারিনি। আন্দোলনে গিয়ে হাতে আঘাত পেয়েছি। কষ্ট হলেও আন্দোলনে আমি অংশ নিয়েছি ভেবে গর্ব হয়। কষ্ট ভুলে যাই।’

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফাতেমাতুজ্জোহরার মতো আরও বেশ কয়েকজন অভিভাবক, যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, আবার কারও হয়তো প্রিয় মানুষটি আহত হয়েছেন, সেই স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে উত্তরা এলাকায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, খাবারের ব্যবস্থা করা, নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত ও প্রয়োজনে লাশ নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়াসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে উত্তরা নামের সংগঠন।

সংগঠনের সদস্য মনীষা মাফরুহা প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে ৯ অভিভাবক মিলে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করেন। আন্দোলনে কীভাবে ছাত্রদের পাশে থাকা যায়, বিভিন্ন সহযোগিতা করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তাঁদের সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন গ্রুপে মোট সদস্য ৮২ জন।