সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, মিরপুর ১০, মিরপুর ১৪, মেরুল বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনে, যাত্রাবাড়ীর কাজলাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় দিনভর মিছিল নিয়ে, স্লোগান দিয়ে চলছে বিক্ষোভ। এতে এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
দক্ষিণে যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরে উত্তরা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মহাখালীতে দুপুরের দিকে রেললাইন অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে বেলা দুইটার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
মিরপুরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলা হয়েছে। মূলত বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে সড়ক অবরোধ করতে থাকে। বেলা একটার পর থেকে অনেক এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সরে গেলে কমতে থাকে যানজট। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঢাকার কোন কোন এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ হয়েছে।
ধানমন্ডিতে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে দুপুর ১২টা থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। এতে দুদিকের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ করছে। বেলা তিনটার দিকে সায়েন্স ল্যাবে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বেলা একটার দিকে নটরডেম কলেজের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। অবরোধের কারণে চারদিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সোয়া ৩টার দিকে পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। এখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সেখানে দুটি ট্রেন আটকে যায়। বেলা আড়াইটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে অবরোধ চলছিল।
মিরপুর ১৪ নম্বর মোড়ে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে দুইদিকের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু কলেজ, মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে আসেন। তাঁরা সড়কে বসে পড়েন। দুপুরে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিল। তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মিরপুরে ১০ নম্বর গোল চক্করে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজি (বিইউবিটি), মিরপুর কমার্স কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজ, ভাসানটেক সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীরা চার দিকের সড়ক বন্ধ করে দেয়। শিক্ষার্থীরা বলেছে, সরকারের সমর্থক কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে তাঁদের বেলা একটার দিকে সরিয়ে দিয়েছেন। পরে ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার থেকে উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে রাজলক্ষ্মী পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি, শান্ত মারিয়াম, উত্তরা, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজ, গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। বেলা তিনটা পর্যন্ত সেখানে অবরোধ চলছে।
দুপুর ১২টার দিকে বাড্ডা ও ভাটারার ১০০ ফুট এলাকায় ইউআরইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাড্ডার নতুন বাজার এলাকায় আসে। তাঁরা সড়ক অবরোধ করলে যানবাহন চালাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করে। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা সেখানে অবস্থান করছিল। ছাত্রলীগের কর্মীরাও তাঁদের পাশাপাশি অবস্থান করছিল। কোনো ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় বেলা ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ করে দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁদের সঙ্গে আশপাশের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয় ।
প্রগতি সরণিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আশপাশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী সকালে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে অবস্থান নেয়। এতে প্রগতি সরণি এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঢোকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা দেড়টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের কয়েকশ ছাত্রী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শন্তিনগরে মোড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। এখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।