ধুলাবালু অ্যাজমার একটি কারণ
ধুলাবালু অ্যাজমার একটি কারণ

অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা অ্যাজমার কারণ

অ্যাজমা নিরাময়যোগ্য রোগ নয়। নতুন এক গবেষণা বলছে, মানুষ দীর্ঘদিন অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার সংস্পর্শে থাকলে এ রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ঝুঁকি বয়স্ক ব্যক্তিদের চেয়ে শিশুদের বেশি।

জার্মানিতে হওয়া এ গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশটিতে এক বছরে যত নতুন অ্যাজমা রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তাঁদের ১১ শতাংশের ক্ষেত্রে এর কারণ ছিল অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা। বিজ্ঞানের ভাষায় এ কণাকে বলা হয় ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম২.৫। এ ধরনের বস্তুকণার ব্যাস সাধারণভাবে মানুষের চুলের ব্যাসের চেয়ে ৩০ ভাগ ছোট হয়ে থাকে।

জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব কেমিস্ট্রির বিজ্ঞানীরা এ গবেষণা করেছেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা। তাঁরা উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার ২২টি দেশে হওয়া ৫৯টি রোগতাত্ত্বিক গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করে ওই নতুন তথ্য দিয়েছেন।

অ্যাজমার একটি কারণ জিনগত। পরিবেশগত কারণেও মানুষের অ্যাজমা হয়। ধুলাবালুও অ্যাজমার কারণ। এ ছাড়া কোনো বস্তু বা খাবারে অ্যালার্জি থাকলে কারও কারও অ্যাজমা দেখা দেয়।
-অধ্যাপক আসিফ মোস্তফা, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

গবেষকেরা বলছেন, অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা ও অ্যাজমার মধ্যে সম্পর্কের কথা জোর দিয়ে বলার মতো প্রমাণ এখন হাতে আছে। জার্মানিতে ২০১৯ সালে ২৮ হাজার মানুষ নতুন করে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ছিল অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা।

বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আসিফ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাজমার একটি কারণ জিনগত। পরিবেশগত কারণেও মানুষের অ্যাজমা হয়। ধুলাবালুও অ্যাজমার কারণ। এ ছাড়া কোনো বস্তু বা খাবারে অ্যালার্জি থাকলে কারও কারও অ্যাজমা দেখা দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ।

গত ২৫ অক্টোবর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এলসেভিয়ারের ওয়ান আর্থ জার্নালের অনলাইন সংস্করণে এ–সংক্রান্ত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

দেশে কত মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত, তার কোনো সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নেই। অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার কারণে দেশের মানুষের মধ্যে কীভাবে অ্যাজমার বিস্তার ঘটছে, সে তথ্যও নেই। তবে প্রায় এক দশক আগের এক জরিপে বলা হয়েছিল, দেশে ১০ লাখ অ্যাজমা রোগী আছেন।

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ অ্যাজমায় ভুগছে। ২০১৯ সালে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এমন রোগীর অ্যাজমার পেছনে মূল কারণ ছিল অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার সংস্পর্শে থাকায় শিশুদের মধ্যে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার হার বয়স্ক ব্যক্তিদের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। একই কারণে অ্যাজমায় শিশুদের মৃত্যুহার বয়স্ক ব্যক্তিদের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।

অনিরাময়যোগ্য রোগ অ্যাজমা মানুষের জীবনমান কমিয়ে দেয়। বুকে শনশন শব্দ করে শ্বাস গ্রহণ ও শ্বাস ত্যাগ করা, ঘন ঘন কাশি দেওয়া অ্যাজমার লক্ষণ। অ্যাজমা আক্রান্ত মানুষের নিশ্বাস ছোট হয়।

গবেষকেরা বলছেন, নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব হচ্ছে, বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। আর লোকজনের উচিত, মাস্ক পরে নিজেকে দূষণ থেকে দূরে রাখা।

কোভিড মহামারির আগে বহির্বিভাগে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী আসত। এখন দৈনিক ১ হাজারের বেশি রোগী আসছে। এর একটি বড় অংশ অ্যাজমা রোগী।
-অধ্যাপক খায়রুল আনাম, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক

বাংলাদেশে কত মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত, তার কোনো সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নেই। অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার কারণে দেশের মানুষের মধ্যে কীভাবে অ্যাজমার বিস্তার ঘটছে, সে তথ্যও নেই। তবে প্রায় এক দশক আগের এক জরিপে বলা হয়েছিল, দেশে ১০ লাখ অ্যাজমা রোগী আছেন। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের একটি। অন্যান্য শহরেও দূষণ অনেক বেশি। অ্যাজমার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ এসব শহরে বিদ্যমান।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়রুল আনাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিড মহামারির আগে বহির্বিভাগে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী আসত। এখন দৈনিক ১ হাজারের বেশি রোগী আসছে। এর একটি বড় অংশ অ্যাজমা রোগী।’