ভারতের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে ভারতে চলমান বিক্ষোভে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আলাদা তিনটি ব্যানারে তাঁরা সংহতি জানান।
বিক্ষোভ মিছিল, মোমবাতি প্রজ্বালন ও প্রতিবাদী স্লোগানসংবলিত নানা প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনের মাধ্যমে তাঁরা এসব সংহতি কর্মসূচি পালন করেন। এতে ভারতের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি দেশে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরা হয়। ঘরে-বাইরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।
‘মেয়েরা রাত দখল করো’ ব্যানারে গতকাল রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদও যোগ দেন। সমাবেশের শুরুতে দেশে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের স্মরণে প্রজ্বলিত মোমবাতি হাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বক্তৃতায় সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘নারীদের জন্য সর্বত্র নিরাপদ পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমি তোমাদের পাশে আছি।’
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ। ভারতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি, দেশে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সবগুলোর বিচার হতে হবে। এবার এটা হতেই হবে, আর কোনো টালবাহানা নয়।’
সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নূজিয়া হাসিন রাশা প্রশ্ন তোলেন, ‘আমাদের কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা হয় না? নিরাপত্তার অজুহাতে কেন ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে ঢুকতে হয়? নতুন উপদেষ্টার কাছে আমাদের অনুরোধ, এই বিষয়গুলো যেন ভালোভাবে দেখা হয়।’
সমাবেশে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলে সংগীত পরিবেশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সমাবেশে একে একে বক্তব্য দেন।
বক্তব্যপর্বের আগে কর্মসূচিতে অবস্থানপত্র পাঠ করা হয়। এতে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে তনু, মুনিয়াসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করা ও আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে নারীর ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অন্যতম।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই স্থানে ভারতে চলমান বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি সমাবেশ হয়। এতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাসহ অন্য সব ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া হয়।
এই সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা অংশ নেন।
ভারতে চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল বিকেল চারটার দিকে প্রথম সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় ‘জাস্টিস ফর আর জি কর, জাস্টিস ফর মৌমিতা’ ব্যানারে। এটিও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা অংশ নেন।
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম নগরী ও ময়মনসিংহ শহরেও সংহতি সমাবেশ হয়েছে।