রক্তাক্ত এক নারীর ভিডিও ভারতের একাধিক এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হয়, এই নারী হিন্দু এবং তিনি মুসলিমদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন
রক্তাক্ত এক নারীর ভিডিও ভারতের একাধিক এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হয়, এই নারী হিন্দু এবং তিনি মুসলিমদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন

আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে হিন্দু নারী ধর্ষণের সাম্প্রদায়িক অপতথ্য এক্সে

শহীদ নূর হোসেন দিবসে (১০ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে ভারতের বিভিন্ন এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে অপতথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে ফ্যাক্টচেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে রক্তাক্ত এক নারীর ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়, ওই নারী হিন্দু এবং তিনি মুসলিমদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই নারী হিন্দু নন এবং তিনি ধর্ষণের শিকারও হননি।

বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমার স্ক্যানার। এতে বলা হয়, ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে ঢাকার জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করতে একই দিন একই স্থানে গণজমায়েতের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে সেদিন দিনভর নানা ঘটনা ঘটে। কর্মসূচি পালন করতে আসা বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ মারধরেরও শিকার হন। এর মধ্যেই রক্তাক্ত এক নারীর ভিডিও ভারতের একাধিক এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হয়, এই নারী হিন্দু এবং তিনি মুসলিমদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

কিছু এক্স পোস্টে ওই নারীকে হিন্দু দাবি করা না হলেও তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিছু পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক্স অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করেও এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

এসব পোস্ট ইতিমধ্যে ৯ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন। সেখানে অসংখ্য মানুষ এমন দাবিকে সত্য ধরে নিয়ে সমালোচনা করছেন, জানাচ্ছেন তীব্র প্রতিক্রিয়া।

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রক্তাক্ত হওয়া এই নারী হিন্দু নন এবং তিনি ধর্ষণের শিকারও হননি। কোহিনুর আক্তার নামের এই নারী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের নেত্রী। তিনি একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচিতে গিয়ে তিনি বিরোধী পক্ষের দ্বারা হামলার শিকার হন। পরে পুলিশ তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে ‘কৃষক লীগের ডায়েরী’ নামের একটি পেজে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এই নারীর নাম কোহিনুর আক্তার। তিনি বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটির সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা কৃষক লীগের সদস্য। তিনি ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে গিয়ে বিএনপি জামায়াত–শিবিরের মব জাস্টিসের শিকার হন এবং পরে গ্রেপ্তার হন।

রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোহিনুর আক্তারের অ্যাকাউন্টের পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, মুসলিম এই নারী কৃষক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ নভেম্বরের কর্মসূচি থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ৩৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানানো হয়েছে। তবে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এ ছাড়া গণমাধ্যমের সংবাদ এবং বিশ্বস্ত সূত্রগুলোর বরাতে সেদিনের কর্মসূচিতে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং কৃষক লীগের মুসলিম নারীনেত্রী কোহিনুর আক্তারকে হিন্দু এবং সম্প্রতি তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে রিউমার স্ক্যানার জানিয়েছে।