শীতের ভ্রমণে এসব স্থানে গিয়েছেন কি

নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—বছরের এই তিন মাস এলেই অনেকের মন অস্থির হয়ে ওঠে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার জন্য। ব্যাগটা গুছিয়ে যে যার মতো ছুটে যান কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের দিকে। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলও বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকের প্রিয় গন্তব্য। কিন্তু গৎবাঁধা একই গন্তব্যগুলোতে বারবার ভ্রমণ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন অনেকেই।

বাংলাদেশে এই পরিচিত ভ্রমণগন্তব্য ছাড়াও এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে ভ্রমণপ্রেমীদের আনাগোনা খুব বেশি একটা নেই। ‘ট্যুরিস্ট স্পট’ হিসেবে এই জায়গাগুলো অসম্ভব সুন্দরও। তাই এবারের শীতে ভ্রমণের জন্য বাছাই করতে পারেন এসব স্থানেও।

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য হলো ‘রেমা-কালেঙ্গা’। এটির অবস্থান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। এটি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত-সংলগ্ন। ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। অভয়ারণ্যটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন। সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি এটি। গহিন জঙ্গলে একটি অন্য রকম ছুটি কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন এই অভয়ারণ্যে।

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে দুভাবে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে নামতে হবে শায়েস্তাগঞ্জ। সেখান থেকে অটোরিকশায় চড়ে যেতে হবে কালেঙ্গা। বাসে শায়েস্তাগঞ্জের ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো। ট্রেনে ভাড়া ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কালেঙ্গার অটোরিকশাভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।

চর কুকরিমুকরি

অনেকের কাছে ভ্রমণের বড় একটা অংশ হলো জার্নি বা যাত্রা। গন্তব্যে পৌঁছানোর চেয়ে এই জার্নিটাই অনেকে বেশি উপভোগ করেন। নদীপথে একটি উপজেলায় পৌঁছে সেখানে ক্যাম্পিং করে থাকাটা অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে। এ রকমই একটি জায়গা হলো ‘চর কুকরিমুকরি’। ভোলার চরফ্যাশন থেকে একটু দূরে অবস্থিত এই চর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। ম্যানগ্রোভ বন, সমুদ্রসৈকত এবং সমুদ্রের সৌন্দর্যে আপনার ছুটিটা এখানে খুব সুন্দর কাটবে। একই সঙ্গে এখানে আছে অভয়ারণ্যও। শীতকালে এখানে দেখা পাওয়া যায় হাজার হাজার অতিথি পাখির।

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে ভোলা, সেখান থেকে মোটরসাইকেল বা টমটমে চড়ে যেতে হবে চরফ্যাশনে। সেখান থেকে ট্রলারে করে যাওয়া যাবে চর কুকরি-মুকরিতে। থাকার জন্য সেখানে সরকারি রেস্টহাউস আছে। চাইলে ক্যাম্পিং করেও থাকতে পারবেন।

সোনাদিয়া

সোনাদিয়া দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার অন্তর্গত কুতুবজোম ইউনিয়নে অবস্থিত। কক্সবাজারের ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে যদি একটু নিরিবিলিতে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার ইচ্ছা হয় তাহলে এই দ্বীপে চলে যেতে পারেন। অপরূপ সৌন্দর্যের আধার এই দ্বীপ কক্সবাজার শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের দূরে সাগরগর্ভে অবস্থিত। দ্বীপটির আয়তন প্রায় নয় বর্গকিলোমিটার। তিন দিকে সমুদ্রসৈকত, সাগর-লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খালবিশিষ্ট প্যারাবন। বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি দ্বীপটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

এখানকার ম্যানগ্রোভ বন এবং উপকূলীয় বনভূমি, সাগরে গাঢ় নীল পানি, কেয়া বন, লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রকারের সামুদ্রিক পাখি পর্যটকদের মনে দোলা দেয়। এই দ্বীপটি বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে মহেশখালী গিয়ে স্পিডবোট বা ট্রলারযোগে সোনাদিয়া চলে যাওয়া যাবে। দ্বীপটি দুর্গম হওয়ায় সেখানে রাত্রিযাপন করতে হলে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। হোটেল নেই। ক্যাম্পিং করে থাকতে হবে। ক্যাম্পিং করার জন্য সেখানেই তাঁবু ভাড়া পাবেন।

নিঝুম দ্বীপ

ঢাকার সর্বদক্ষিণে স্বপ্নের মতো সুন্দর নিঝুম দ্বীপ অবস্থিত। ম্যানগ্রোভ বন, সমুদ্র এবং অপরূপ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে এখানে ঘুরতে যেতে পারেন। সকালবেলা চিত্রাহরিণের সৌন্দর্য এবং রাতে শিয়ালের ডাকের রোমাঞ্চ আপনার এই ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখবে। সাগরের মাঝখানে হওয়ায় নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রার শুরুটা সড়কপথে হলেও শেষ অবধি জলপথ ব্যবহার করতেই হবে।

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল অথবা ধানমন্ডির জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাসের ধরনের ওপর ভিত্তি করে এসব বাসে ভাড়া পড়তে পারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সোনাপুর থেকে নলচিরা এবং নলচিরা থেকে ট্রলারযোগে চলে যাওয়া যাবে নিঝুম দ্বীপ।