ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতি নাওকির দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলেছে, জাপানি রাষ্ট্রদূত পুলিশের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ এনেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিশেষ শাখার প্রধান (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকার পুলিশ সুপার মো.আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
গত সোমবার রাজধানীতে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘গত (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে আগের রাতেই পুলিশ ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল বলে আমি শুনেছি। অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।’
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তাঁর (জাপানি রাষ্ট্রদূত) মন্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য অত্যন্ত বিব্রত ও মর্মাহত হয়েছেন। জাপানি রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য অসমর্থিত, ভিত্তিহীন ও অনভিপ্রেত। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্তে দেশের মূল ধারার সব গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতামতে সর্বত্রই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। গত নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তবিহীন ও যাচাই-বাছাই ছাড়া জাপানি রাষ্ট্রদূতের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির এমন মন্তব্য বাংলাদেশ পুলিশসহ দেশবাসীকে হতবাক করে দিয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকাসংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য হলো বাংলাদেশ পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেয়। প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া বা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের ভোট দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের কোনো ভূমিকা বা কার্যক্রম নেই। পুলিশ সব নির্বাচনে অত্যন্ত পেশাদারির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা দেয়। পুলিশের মতো একটি পেশাদার বাহিনী সম্পর্কে জাপানি রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় বীর সদস্যরা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রায় ১৪ হাজার পুলিশ সদস্যের সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ ও প্রায় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ পুলিশ সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ পেশাদারি ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য ইতিমধ্যে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। অনুরূপভাবে অতিমারি করোনায় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, করোনায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির সৎকার করা, দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রচলিত পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি মানবতার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও উন্নয়নের বৃহৎ অংশীদার। ঐতিহাসিকভাবে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুগভীর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে জাপানি রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক মন্তব্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে হতাশ এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাঁর বক্তব্যের উল্লিখিত অংশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ সম্পর্কে ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তাঁর আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছে।