ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে

প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও। চলতি বছরের ছয় মাস পেরোয়নি। এরই মধ্যে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ২৩৮ জন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল রোববার সকাল আটটা) আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে ৩৯৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের বছরগুলোর তুলনায় মারাত্মক হতে পারে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছে।

ডেঙ্গু যে দেশে ঢোকে, সেখান থেকে বের হয় না। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশে দুই যুগের বেশি সময় ধরে এর নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করা হয়নি। ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও এর নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি
জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ
ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা

ডেঙ্গুতে গত বছর প্রথম ছয় মাসে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯। সেই হিসাবে চলতি বছরের পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নতুন করে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকাতেই ২৬৭ জন। বর্তমানে দেশে মোট ১ হাজার ৪৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে ১ হাজার ১১৭ জন।

এ পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষায় দুটি পরামর্শ দেন মুশতাক হোসেন। এর একটি হলো, অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে ভ্রমণে বিরত থাকা। আর পরিবহনগুলোতে যথেষ্ট মাত্রায় মশার ওষুধ ছিটানো।

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ১৮ জুন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩০৫ জন। পরদিন ভর্তি হন ৩২২ জন। এরপর প্রতিদিন রোগী বেড়েছে। তবে শুক্রবার দেওয়া সরকারি তথ্যে দেখা যায়, রোগীর সংখ্যা কমে হয় ৪৬। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে সেদিন এ-ও বলা হয় যে শুক্রবার বেশির ভাগ হাসপাতাল তথ্য না দেওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা দেওয়া যায়নি। পরের দিনের সঙ্গে তা যুক্ত করা হবে। পরদিন শনিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০।

এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়ি ফেরা। এতে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে ডেঙ্গু রোগীর চলাচল বেড়ে যাবে। কেউ হয়তো হালকা জ্বর নিয়েই ঢাকা ছাড়বেন, কিন্তু হয়তো তিনি ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেছেন। আবার মশাও এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষায় দুটি পরামর্শ দেন মুশতাক হোসেন। এর একটি হলো, অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে ভ্রমণে বিরত থাকা। আর পরিবহনগুলোতে যথেষ্ট মাত্রায় মশার ওষুধ ছিটানো।

এ বছর ডেঙ্গুর ধরন (ভেরিয়েন্ট) ডেন-২-এ বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সীমিতসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রোগী ডেঙ্গুর ধরন ডেন-২-এ আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ৩৮ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন অন্য ধরন ডেন-৩-এ। আইইডিসিআর ডেঙ্গুর ধরন সম্পর্কে এ তথ্য জানিয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গু যে দেশে ঢোকে, সেখান থেকে বের হয় না। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশে দুই যুগের বেশি সময় ধরে এর নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করা হয়নি। ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও এর নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।’ তাঁর পরামর্শ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে একটি সঠিক কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।