তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের অগ্রগতির সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশীসহ সমমানের অর্থনীতির দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) গত মাসে (জুন) আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) ২০২৪ প্রকাশ করে। সূচকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৭০ দেশের আইসিটি পরিষেবার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে সংগ্রহ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সূচকটি করা।
আইডিআই ২০২৪-এ ১০০-এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৬২। গত ডিসেম্বরে আইডিআই ২০২৩ প্রকাশিত হয়। এতে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬১ দশমিক ১। অর্থাৎ বাংলাদেশের সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।
সূচকে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, ভুটানের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান কিছুটা পিছিয়ে। সূচকে ভারতের তথ্য নেই।
বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক প্রথম আলোকে বলেন, আইসিটি খাতে বাংলাদেশের কাজ শুরু হয় ১৫ বছর আগে। অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করে। তবে সরকার যেসব নীতি ও উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও ভালো অবস্থানে যাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা, তাতে তিনি সন্তুষ্ট।
এবারের সূচকে বৈশ্বিক গড় স্কোর ৭৪ দশমিক ৮। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের গড় স্কোর ৬৪ দশমিক ৮। বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় পড়েছে। সে হিসেবে বৈশ্বিক গড় ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের গড় স্কোর থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে।
সূচকে ১০টি নির্দেশকের মধ্যে ৭টিতেই বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের গড় স্কোরের চেয়ে পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজে (থ্রি-জি ও ফোর-জি)। এ ছাড়া মোবাইল ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবস্ক্রিপশনে (জিবি) নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় সূচকের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো করেছে। তবে এশিয়া প্যাসিফিকের চেয়ে পিছিয়ে আছে।
আইডিআই সূচকে মূলত ‘সর্বজনীন সংযোগ’ ও ‘অর্থবহ সংযোগ’—এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন সংযোগে মানুষ, পরিবার, কমিউনিটি ও ব্যবসা সংযুক্ত। সর্বজনীন সংযোগে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ। সর্বজনীন সংযোগের তিনটি নির্দেশক হলো ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্যবহার, পরিবারে ইন্টারনেট ব্যবহার ও প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। এই তিনটিতেই বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে।
অর্থবহ সংযোগের জন্য উন্নত অবকাঠামো প্রয়োজন, যা দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সংযোগ নিশ্চিত করে। অর্থবহ সংযোগে বাংলাদেশের স্কোর ৮৪ দশমিক ৫। অর্থবহ সংযোগের নির্দেশকগুলো হলো মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজ (থ্রি-জি ও ফোর-জি), মোবাইল ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবস্ক্রিপশন (জিবি), ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবস্ক্রিপশন (জিবি), মাথাপিছু আয়ের তুলনায় মোবাইল ডেটা ও ভয়েস, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ব্যয়, মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
সূচকের ১০টি নির্দেশকের মধ্যে বাংলাদেশে ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৩৮ দশমিক ৯ আর ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেট সুবিধা আছে। আগের সূচকেও তা একই ছিল। অর্থাৎ সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়েনি।
সূচক অনুযায়ী, দেশে বছরে গড়ে মাথাপিছু মোবাইল ডেটা ব্যবহার হয় ৭৮ দশমিক ৭ জিবি আর ব্রডব্যান্ড ব্যবহৃত হয় ১ হাজার ১৯৫ দশমিক ৫ জিবি।
আইটিইউ বলছে, ইন্টারনেট যথাযথ অর্থনৈতিক সুবিধা, যোগাযোগ, বিনোদন ও পারস্পরিক সহযোগিতায় বিপ্লব ঘটায়। প্রয়োজনীয় পরিষেবা, জ্ঞান অর্জন, শেখার সুযোগ ও চাকরির সম্ভাবনায় ডিজিটাল সংযোগ এখন অত্যাবশ্যক দৈনন্দিন বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখনো বিশ্বের জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ ‘অফলাইনে’ রয়ে গেছে। এ ছাড়া অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খুব দুর্বল সংযোগের সঙ্গে যুক্ত। এতে ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সূচকে এশিয়া প্যাসিফিক ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলো স্কোর গড়ে ২ শতাংশ বেড়েছে। সেখানে বাংলাদেশের স্কোর তেমন বাড়েনি। মূলত মোবাইল ডেটা ও ব্রডব্যান্ড ব্যবহারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। অবকাঠামো তৈরিতে এত বিনিয়োগ হলো, ইনফো সরকার ১, ২, ৩ প্রকল্প হলো। কিন্তু এসব ব্যবহার করার বা এসব অবকাঠামোর সুবিধা নেওয়ার লোক নেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সরকারকে এখন খুঁজে দেখা উচিত, সমস্যা কোথায়। ডিজিটাল সাক্ষরতা নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকার রাস্তা বানিয়েছে—এখন সে রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য মানুষকেও প্রশিক্ষিত করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের স্কোর এখন যা আছে, তার দ্বিগুণ করতে হবে।