বৈশ্বিকভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ৩০ শতাংশ বন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে সংরক্ষিত বনের হার ১৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এই হার ১২ শতাংশ। প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে আন্তসম্পর্কের মাধ্যমে কাজ করলে বাংলাদেশে বন সংরক্ষণের বৈশ্বিক এই ৩০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত অর্জন সম্ভব। এ পদ্ধতিটি সবচেয়ে টেকসই ও যুগোপযোগী।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘দ্য ইমপ্লিমেনটেশন অ্যান্ড মনিটরিং অব দ্য কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক: কমিউনিটি বেজড সলিউশন অ্যান্ড কন্ট্রিবিউশনস টু দ্য গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি টার্গেটস’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা সুইডবায়ো, বন অধিদপ্তর, ফরেস্ট পিপল প্রোগ্রাম (এফপিপি) ও উন্নয়ন অন্বেষণের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির আন্তসম্পর্ককে কাজে লাগাতে হবে। কৌশলের অংশ হিসেবে লোকজ ও ঐতিহ্যগত জ্ঞান ব্যবহারের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের সংকট, জীববৈচিত্র্যের ক্রমাগত হ্রাস ও জলবায়ুগত–সংকট মোকাবিলায় শ্বাসমূলীয় বনকে ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য বিজ্ঞান এবং লৌকিক জ্ঞানকে ব্যবহার করতে হবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফপিপির সিনিয়র পলিসি উপদেষ্টা মাওরিজিও ফারহান ফেরারি। বন সংরক্ষণের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন সুন্দরবনের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।
আলোচনা শেষে সুন্দরবনের ওপর একটি আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দ্বিতীয় সেশনে বক্তব্য দেন এফপিপির গ্লোবাল পার্টনারশিপ কো-অর্ডিনেটর ক্যারেলিন ডি ঝং এবং বন বিভাগের উপপ্রধান বনসংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির। এ সেশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাঁদের আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘আমরা জাতীয় জীববৈচিত্র্য অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ নিয়ে সব মানুষ চিন্তিত। বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রকৃতিনির্ভর সমাধান পেতে চান।’
প্রসঙ্গত, গত বছর কানাডার মন্ট্রিয়লে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্যবিষয়ক সম্মেলন কপ-১৫ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৩০ শতাংশ ভূমি ও জলভাগ সংরক্ষিত হিসেবে রক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত হয়। বর্তমানে যা ১৭ শতাংশ ভূমি ও ১০ শতাংশ সামুদ্রিক অঞ্চল সংরক্ষিত হিসেবে আছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সুন্দরবনের জলাধার কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে ছিল ৪৪৮ হেক্টর, ২০২০ সালে তা ৩২২ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। কাঁকড়া বিচরণস্থল ৩ হাজার ১১৫ হেক্টরে থেকে কমে ১ হাজার ৬৩৪ হেক্টরে এসে নেমে এসেছে। সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে সুন্দরবনের ১০ শতাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
বক্তারা বলেন, সুন্দরবনের আয়তন কমার পাশাপাশি কমছে মৎস্য সম্পদও। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সমাধান খুঁজতে হবে। সুন্দরবনে পরিকল্পিতভাবে গোলপাতার গাছ রোপণ করে এটাকে বাড়তে দিতে হবে। এখানকার জেলেরা যেন নিয়ম মেনে মাছ ধরেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের মাছ ধরা যাবে না।