ইউরোপীয় পার্লামেন্ট

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ জানিয়ে প্রস্তাব গৃহীত

ছবি: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফেসবুক থেকে নেওয়াছবি: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফেসবুক থেকে নেওয়া
ছবি: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফেসবুক থেকে নেওয়াছবি: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফেসবুক থেকে নেওয়া

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আজ বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায়ের নিন্দা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অবিলম্বে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।

বিকেলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট এবং ঢাকা ও ব্রাসেলসের কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে অধিকারের মামলা’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উত্থাপন করে মধ্য ডানপন্থী, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট, বামপন্থীসহ সাতটি গ্রুপ। ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে স্থানীয় সময় বুধবার রাতে প্রস্তাবটি নিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনের বিতর্কে আটজন সদস্য অংশ নেন। এর মধ্যে ছয়জন প্রস্তাবের পক্ষে এবং দুজন বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা করেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবাধ বাজার সুবিধা ‘এভরিথিং বাট আর্মসের’ (ইবিএ) পরিসর আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সনদের লঙ্ঘনের মাধ্যমে অধিকারের মামলাটি একটি পশ্চাদ্‌গামী পদক্ষেপ, যা উদ্বেগের। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।

প্রস্তাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।

বলপূর্বক অন্তর্ধানের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করা হয়েছে প্রস্তাবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে উৎসাহিত করা হয়েছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা তাঁদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এটা হস্তক্ষেপ: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের বিষয়ে আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি যৌথ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক এবং ভোটাভুটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করে সরকার। একে সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও চক্রান্ত হিসেবে দেখছে।

আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, আটজন বক্তব্য দিয়েছেন। তার মধ্যে দুজনের কথা পরিষ্কারভাবে এসেছিল যে তাঁরা এটার পক্ষে নন। একজন এ রকমও বলেছেন, এ ধরনের আচরণ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নতুন করে উপনিবেশবাদ উসকে দিতে পারে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর এ রকম আচরণ ঠিক নয়। আরেকজন বক্তা বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নিলে এটা হিতে বিপরীত হতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওনাদের একাধিক বক্তা যে লাইনে বলেছেন, আশা করি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অন্য এমপিরা সামনে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হবেন না। আমরা যেটা মনে করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আমাদের একটা পরিপক্ব সম্পর্ক রয়েছে। সেই পরিপক্ব সম্পর্কের জায়গা থেকে আশা করি, আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে, সেটাও আবার আদালতে বিচারাধীন; এই ধরনের কার্যক্রমে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট হস্তক্ষেপ করবে না। এটা হস্তক্ষেপ।’