গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে স্বাধীন সাংবাদিকতার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেছেন, ‘আমি সাংবাদিক, আমার স্বাধীনতার জন্য সরকারকে আমার প্রয়োজন। আর সঠিকভাবে দেশ চালানোর জন্য সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রয়োজন। এভাবে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে ওঠে।’
বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মাহ্ফুজ আনাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন,‘সমাজতন্ত্র শ্রমিকের কথা বলে, খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলে, সাধারণ মানুষের কথা বলে। তারপরও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমাজে মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ হলো, সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতা ছিল না, ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিল না। যার ফলে সমাজের পরিচালক, নীতিনির্ধারকেরা কখনোই অবগত হতে পারেননি, তাঁরা যেভাবে সমাজকে চালাতে চাচ্ছেন, সেভাবে সমাজ চলছে কি না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘সভ্যতার বিবর্তনে সবচেয়ে বড় যে সংগ্রাম, সেটা হলো স্বাধীনতার সংগ্রাম। সবার প্রথমে গোষ্ঠী স্বাধীনতা। তারপরে আরও গভীরে ব্যক্তিস্বাধীনতা। সাংবাদিক যদি হতে চাও, তোমাকে সবচেয়ে আগে ভালোবাসতে হবে ব্যক্তিস্বাধীনতা। তুমি যদি প্রশ্ন করতে না জানো, তোমার যদি প্রশ্ন করার স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে সাংবাদিকতার কোনো অর্থ নেই। তোমার ভালোবাসা থাকতে হবে স্বাধীনতার সঙ্গে। মেধা দিয়ে প্রশ্ন করে সমাজের মূল্যায়ন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের, গণতন্ত্রের, স্বাধীনতার এবং জনগণের প্রয়োজনে তোমার সাংবাদিকতা। এর বাইরে যদি কোনো প্রয়োজন থাকে, তাহলে অচিরেই তুমি এই পেশা থেকে সরে যাও। সমাজসেবার স্পৃহা নিয়ে, মনে স্বাধীন চেতনাবোধ নিয়ে এই পেশায় আসতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠতাই সাংবাদিকতার মূল বিষয়। এটি ছাড়া সঠিক সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। গণমাধ্যমে সত্যের অপলাপ ও ফরমায়েশি সাংবাদিকতা কাম্য নয়। অপসাংবাদিকতা সমাজ, দেশ তথা মানবসভ্যতাকে কলুষিত করে। সত্যের জয় সব সময় নিশ্চিত। তাই সত্য প্রকাশ করা ও সত্য অনুসন্ধান করাই সাংবাদিকতার প্রধান কাজ।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর বেলা ১১টায় বিভাগের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার একাডেমিক ও পেশাগত পরিসরে অসামান্য অবদান রাখায় গোলাম রহমান ও মাহ্ফুজ আনামকে ‘আজীবন সম্মাননা-২০১৮’ দেওয়া হয়।
বিভাগের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন মোজ্জামেল হক এবং সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষকেরা। আলোচনা সভা শেষে বিভাগের নতুন ওয়েবসাইট ‘জেএমএসপেনডটকম’-এর উদ্বোধন করা হয়।