স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়ি গ্রামে হামলা ঠেকাতে পারত। তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এ হামলা ঘটে। ওই হামলার ঘটনার তদন্তে গঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। আজ সোমবার কমিশনের কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ সভায় এ প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়। সভার পর ওই কমিটির প্রধান বাঞ্ছিতা চাকমা প্রথম আলোকে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলো জানান।
গত ২ জুন স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনটি পাহাড়ি গ্রামে আগুন দেওয়া হয়। গ্রামগুলো হলো তিনটিলা, বাত্যাপাড়া ও মানিকজোড়ছড়া।
ওই ঘটনার পরপরই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমাকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির আর দুজন সদস্য ছিলেন কমিশনের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান ও রাঙামাটি কার্যালয়ের উপপরিচালক গাজী সালাউদ্দিন।
কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটি গত ১৬ জুন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। আজকের সভায় ওই প্রতিবেদন গৃহীত হয়।
আক্রমণ কারা করেছিল—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘যারা জানাজায় অংশ নিতে গিয়েছিল (তারাই)। সেই মিছিল থেকেই ইচ্ছে করেই কিছু কিছু ফাঁক দিয়ে ঢুকে, সম্ভবত মিছিল চলার সময়ে মিছিল থেকেই আক্রমণ করা হয়েছে।’
গত ১ জুন দুপুরে খাগড়াছড়ি সদরের চারমাইল এলাকায় রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন সকালে মোটরসাইকেলে দুজন যাত্রী নিয়ে তিনি লংগদু থেকে খাগড়াছড়ি যাচ্ছিলেন। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয় বাঙালিরা লাশ নিয়ে মিছিল বের করেন।
পাহাড়িদের গ্রামে ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, প্রায় ২০০ বাড়িঘর পুড়ে গেছে। আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত ছিল কি না—সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ রকমই মনে হয়েছে।’
বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘ওরা (পাহাড়িরা) শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে বলেছে যে এ রকম ঘটনা (আক্রমণ) ঘটতে পারে। (পুলিশ-প্রশাসন) বলেছে, কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিকভাবে মিছিল করার অধিকার ওদের (বাঙালিদের) আছে; ওরা করুক। কিছুই হবে না, আশ্বাস দিয়েছিল। তারপরও এটা হয়েছে। সে জন্য আমরা মনে করি, এটা অনেকেই জানত। তারা (পুলিশ প্রশাসন) নীরব দর্শক ছিল। ওরা চাইলে বন্ধ করতে পারত।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখানে নিষ্ক্রিয়তা ছিল, অবশ্যই (এটা) প্রশাসনের ব্যর্থতা। তারা যদি আগে থেকে সতর্ক হতো, তাহলে এটা এড়ানো যেত।’
গ্রাম পোড়ানোর ঘটনার সময় আতঙ্কে এসব গ্রামের শতাধিক পাহাড়ি পরিবার পালিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের ভূঁইয়াছড়া, মধ্যমপাড়া, রাঙাপানিছড়া ও হারিহাবা এলাকার বনে, পরিত্যক্ত ঘরে ও গাছতলায় আশ্রয় নেয়। এমনকি মানিকজোড়ছড়ার পাশের গ্রাম বড়াদমের লোকজনও ভয়ে পালিয়ে যান। এ সময় সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা তিন পাহাড়ি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়।
মানবাধিকার কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কমিশনের এ প্রতিবেদন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানায় মানবাধিকার কমিশন।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে জানতে চাইলে আজ সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘আমার কাছে প্রতিবেদন আসুক। তারপর মন্তব্য করব। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই কথা বলব।’