জনপ্রতিনিধি হলেও ক্ষমতার চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের কাজ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে শুধু মেজবান খাওয়া আর কারও কবর জিয়ারতের মধ্যে। কাজ করতে না পারায় জনগণের কাছে তাঁরা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যকরী কমিটির সম্মেলনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে কাছে পেয়ে এভাবে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের এলজিআরডি ভবনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০৩টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জেলার প্রতিটি থেকে একজন করে উপজেলা চেয়ারম্যান বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান।
চেয়ারম্যানরা বলেন, উপজেলা পরিষদ আইনে তাঁদের ক্ষমতার কথা বলে দেওয়া আছে। কিন্তু তাঁরা সেই ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁদের সব ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। উপজেলার সব ক্ষমতা সাংসদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হাতে। এমনকি তাঁদের সভায়ও ডাকা হয় না। এ কারণে তাঁদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে জনগণের দেওয়া মেজবানে অংশগ্রহণ ও তাদের কবর জেয়ারতে।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সম্মানের কোনো জায়গা নেই। কথা শোনার লোকও নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও কাজের মাধ্যমে জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। উপজেলা পরিষদ আইনে দেওয়া ক্ষমতার বাস্তবায়ন চাই।’
পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণের প্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবে যে যে কাজই করুক না কেন, আমাদের সবার লক্ষ্যে একটাই—দেশকে এগিয়ে নেওয়া।’
বিরোধী দল সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চায় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাকে সংসদে প্রশ্ন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, সাংসদেরা উপজেলা পরিষদে গেলে ক্ষমতা খর্ব হয়। এই প্রশ্ন করেছে বিরোধী দল। তারা চায় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হোক। কারণ, এটি হলে পরবর্তী সময়ে সাংসদ আর নির্বাচিত হবেন না। সাংসদদের নিয়েই তো সরকার হয়। তাই তাঁদের নির্বাচিত করার বিষয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হারুন অর রশিদ হাওলাদার তাঁর বক্তব্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। এর মাধ্যমে তাঁদের ক্ষমতার অধিকার ফিরে পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজকের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, প্রয়োজন হলে উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করা হবে। লিখিতভাবে দেওয়া হলে যাচাই–বাছাই করা হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ কে এম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুশংকর চন্দ্র আচার্য, অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হারুন অর রশিদ হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।