ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রাখা বেঞ্চে বিষণ্নমুখে বসে ছিলেন দুই ভাই কাওসার ও সবুজ। পাশে তিন চাচা কেঁদে চলেছেন। ট্রেন দুর্ঘটনার পরপর এই বিদ্যালয়ে যে নয়জনের লাশ রাখা হয়েছে, তাঁদের মধ্য কাওসার (২৮) ও সবুজের (২৪) বাবা–মা রয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে কাওসার প্রথম আলোকে বললেন, তাঁর বাবা মুজিবুর রহমান ও মা কুলসুম আরা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল থেকে চাঁদপুরে ফিরছিলেন।
মুজিবুর–কুলসুমের তিন ছেলের মধ্যে কাওসার বড়। সবুজ ঢাকায় একটি আইসক্রিম কারখানায় কাজ করেন। আর ছোট ছেলের নাম ইয়াসিন (১৮)। তাঁদের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও উত্তর ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রামে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২ টা ৪৮ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
কাওসার বলেন, গতকাল রাত আটটার সময় মা কুলসুম আরার সঙ্গে সবশেষ মুঠোফোনে কথা হয় তাঁর। মা বলেছিলেন, তাঁরা বাড়ি আসছেন। রওনা হয়েছেন। ছেলেকে দুশ্চিন্তা না করতে বলেছিলেন। এর আগের দিন বাবার সঙ্গেও কথা হয়েছিল তাঁর। বাবা তাঁকে বলেছিলেন, মেজ ছেলে সজীব টাকাপয়সা বেশি খরচ করে ফেলে। ওকে যেন বুঝিয়েশুনিয়ে খরচ কমানো যায়। আহাজারি করে কাওসার বলেন, ‘মা বলছিল, বাড়ি আইতেছি, চিন্তা কইরো না।’
বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মুজিবুরের তিন ভাই আইয়ুব, ইউসুফ ও মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।
আইয়ুব বলেন, তাঁদের চার ভাইয়ের মধ্যে মুজিবুর রহমান সবার বড় ছিলেন। তিনি ঢাকা থেকে প্রসাধন সামগ্রী কিনে শ্রীমঙ্গলে বিক্রি করতেন। ২৫ বছর ধরে শ্রীমঙ্গলে স্টেশন এলাকার কাছে একটি বাসায় ভাড়া থেকে ফেরি করে প্রসাধন সামগ্রী বিক্রির কাজ করছেন। স্ত্রী কুলসুম ও দুই ছেলে চাঁদপুরে গ্রামের বাড়ি থাকতেন। এক সপ্তাহ আগে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলেন কুলসুম। গতকাল তাঁরা দুজন একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন।
আইয়ুব বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভাতিজা শাহাদত হোসেন বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে দুজনের লাশ শনাক্ত করেন। তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোনে খবর পেয়ে তাঁরা লাশ গ্রহণ করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছেন।