জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন সম্ভব। এই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্র এখনো আছে। এটা খুব একটা লম্বা সময়ের ব্যাপার নয়। পাহাড়ের কান্না থামিয়ে সেখানে রং ফিরিয়ে আনাও সম্ভব। পাহাড়িদের মানবাধিকারের বিষয়টি শুধু পাহাড়িদের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় সমস্যা।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ‘বিবর্ণ পাহাড়; পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।
মিজানুর রহমান বলেন, ভূমি মালিকানা সমস্যার সমাধান করা হলে পার্বত্য জেলাগুলোতে সব সমস্যা সমাধান হবে।
অনুষ্ঠানে মঙ্গল কুমার চাকমা রচিত ‘বিবর্ণ পাহাড়’ বইটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এবারের বইমেলায় ২৮টি নিবন্ধ সমৃদ্ধ এই বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করেছে বটেশ্বর বর্ণনের প্রকাশক বিলু কবীর। তবে আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন হলো আজ।
বইটি সম্পর্কে সারাংশ তুলে ধরে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা বলেন, পাহাড় আজ বিবর্ণ হয়ে আছে। সেখানকার মানুষের জীবনও ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে তীব্র পানির সংকট। কারণ, পাহাড়ে আর সবুজ নেই।
সভাপতির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাহাড়ের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। পাহাড়িদের চোখ দিয়ে তাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। পাহাড়িদের হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি দিয়ে সমস্যাগুলো দেখতে হবে।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, রাষ্ট্র দিন দিন হৃদয়হীন হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের এই হৃদয়হীনতা শুধু পাহাড়িদের জন্য নয় সাধারণ গরিব বাঙালি, খেটে-খাওয়া মানুষের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র হৃদয়হীন।
পাহাড়িদের জীবনে যে বিবর্ণতা তার দায় রাষ্ট্রের উল্লেখ করে কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়িরা শান্তি মেনে নিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যারা চুক্তি করেছে তারা সেসব সম্পূর্ণ মানেননি। এই না মানার ইতিহাস গত ২২ বছরের। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। এর দায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। গত ২২ বছরে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অনেক রক্ত ঝরেছে, উচ্ছেদ হয়েছে, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, পাহাড় তো বিবর্ণ ছিল না। এটাকে ক্রমাগত বিবর্ণ করা হয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি করা হলো। সেই চুক্তি বাস্তবায়নে এত দৈন্য কেন?
আলোচনা সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সদস্য হরেন্দ্র নাথ সিং। আরও বক্তব্য দেন প্রকাশক বিলু কবীর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ।